যে কারণে বিয়ের ৩৪ দিনের মাথায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর মৃত্যু

স্বামী রাজিব খানের সঙ্গে নুর নাহার
স্বামী রাজিব খানের সঙ্গে নুর নাহার  © সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের বাসাইলে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নুর নাহারের (১৪)। পরিবারে অভাব অনটনের কারণে ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা তাকে নানার বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। সম্প্রতি প্রবাস ফেরত ৩৫ বছর বয়সী রাজিব খান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে এই অপ্রাপ্ত বয়সে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে ছেলে প্রবাসী হওয়ায় নুর নাহারের পরিবার লোভ সামলাতে না পেয়ে তার হাতে তুলে দেয় মেয়েকে। কিন্তু বিয়ের মাত্র ৩৪ দিনের মাথায় স্বামীর বর্বর যৌনসঙ্গমে এই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে।

অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় শারীরিক সম্পর্কের কারণে নুর নাহারের রক্তক্ষরণ হয়। তারপরও থামেনি স্বামী রাজিবের পাষণ্ডতা। এরপর গত রোববার নুর নাহার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

এ ঘটনায় স্থানীয়রা জানায়, নুর নাহার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তবে পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় নানার বাড়ি উপজেলার কলিয়া গ্রামে থেকে পড়াশোনা করতেন তিনি। এক মাস চারদিন আগে একই উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে ৩৪ বছর বয়সী প্রবাস ফেরত রাজিব খানের সঙ্গে নুর নাহারের বিয়ে হয়। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে হলেও রেজিস্ট্রি হয়নি।

আর বিয়ের দিন থেকে নুর নাহারের সঙ্গে মেলামেশা করেন রাজিব খান। পরে ওইদিন থেকেই তার যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়। একপর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করান। রক্তক্ষরণ হলেও স্বামী রাজিব খানের ‘বর্বর’ যৌনসঙ্গমের নেশা কমেনি। এতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন কিশোরী নুর নাহার। পরে ২২ অক্টোবর তাকে টাঙ্গাইলের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়।

অবস্থার অবনতি হলে নুর নাহারকে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। রোববার ভোরে সেখানেই নুর নাহারের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিনই নানার বাড়ির কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এ ব্যাপারে নুর নাহারের নানা লাল খান বলেন, বিয়ের রাত থেকেই যৌনাঙ্গ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল বলে নাতনি আমাকে জানিয়েছে। এ জন্য নুর নাহারের শাশুড়ি তাকে কবিরাজের ওষুধ খাওয়ান। কিন্তু রক্তক্ষরণ বেশি হলে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফিরোজুর রহমান বলেন, নারীর প্রথম যৌন মিলনে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করে। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হলে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ জন্য দ্রুত গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।

সেখানকার ডাক্তাররা বলেছেন, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেওয়ার কারণে নুর নাহারের গোপনাঙ্গ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মূলত স্বামীর কারণেই নুর নাহারের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তার।

টাঙ্গাইলের এএসপি আব্দুল মতিন বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ