এবার ডিবির এএসআইয়ের নেতৃত্বে নবম শ্রেণীর ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

সুমাইয়া পারভীন মেঘলা ও সম্পা বেগমকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে হারাগাছ থানা পুলিশ
সুমাইয়া পারভীন মেঘলা ও সম্পা বেগমকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে হারাগাছ থানা পুলিশ

এবার সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ডিবি পুলিশের এএসআই’র বিরুদ্ধে। রংপুর মেট্রোপলিটনের ওই পুলিশ রায়হানুল হকের নেতৃত্বে নগরীর হারাগাছ থানার ক্যাদারের পুল এলাকায় একটি বাড়িতে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ডেকে এনে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরপিএমপি কমিশনার অভিযুক্ত এএসআইকে আটক করার পাশাপাশি সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। আরো দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে আরপিএমপি কমিশনারের নির্দেশে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। রায়হানুলের ডিএএনএ পরীক্ষা করার কথা জানিয়েছে পিবিআই। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার দুই নম্বর আসামি রায়হানুল। এদিকে ওই ছাত্রীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে রায়হানকে মামলার দুই নম্বর আসামি করায় ক্ষোভ জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ জানিয়েছেন, যেহেতু ঘটনাটিতে মেট্রো ডিবি পুলিশের একজন এএসআই এজহারভুক্ত আসামি তাই নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্যই হারাগাছ থানা থেকে মামলাটি তদন্তের ভার আমরা পিবিআইকে দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেতে চাই।

তিনি বলেন, এএসআই রায়হানুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে আটক করে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করে রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী হওয়ায় যেসব প্রসিডিউর করা প্রয়োজন তা করা হচ্ছে। পিবিআই চাওয়া মাত্রই আমরা রায়হানুলকে তাদের কাছে হস্তান্তর করবো।

তিনি আরো বলেন, অপরাধী তো অপরাধীই। তার কোনো পরিচয় নেই। ঘটনাটি জানা মাত্রই আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করে নির্যাতিতা ও তার পরিবারের জবানবন্দি নিয়ে মামলা নিয়েছি। এখানে কেউই পার পাবে না।

পিবিআই রংপুর জেলার পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, দুপুরের পর আরপিএমপি থেকে আমরা মামলাটির তদন্তভার পাই। ভার পাওয়া মাত্রই আমরা হাসাপাতালের ওসিসিতে গিয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর জবানবন্দি রেকর্ড করি। এছাড়াও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া ঘটনার তথ্য উপাত্ত ও নথিপত্র নিয়ে আমরা প্রকাশ্য অপ্রকার্শ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি।

তিনি বলেন, হারাগাছ থানা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় আমাদের কাছে গ্রেফতার মামলার এক নম্বর আসামি সুমাইয়া পারভীন মেঘলা (২২) ও অপর সহযোগি শম্পাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা সেখান থেকে নিয়ে এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি। এছাড়াও পুলিশ লাইনে ক্লোজড অবস্থায় আছেন এএসআই রায়হানুল। আমরা যথাসময়ে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে নিবো।

তিনি আরো বলেন, আমরা রায়হানের ডিএনএন পরীক্ষা করে তা ম্যাচিং করাবো। এ ঘটনায় কোনো অভিযুক্তই কোনোভাবে ছাড় পাবে না। এটি নিশ্চিয়তা আমরা দিতে চাই।

এদিকে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে নেয়া হয়েছে। সেখানে তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, হারাগাছ থানাধীন ওই ছাত্রী গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম ওরফে (রাজুকে) সাসপেক্ট করা হয়েছে। রায়হান ওই মামলার ২ নং এজহারভুক্ত আসামি। তিনি এখন আমাদের হেফাজতে আটক অবস্থায় আছেন। বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলো মেইনটেইন করার পরই তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কেউই ছাড়া পাবে না।

এদিকে এ ঘটনায় নিবিড় তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই। তদন্ত সূত্রগুলো বলছে ডিবিতে আসার আগে এএসআই রায়হার হারাগাছ থানায় কর্মরত ছিলেন। তদন্তে এএসআই রায়হানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে মেয়ে নিয়ে গিয়ে দেহ ব্যবসাসহ তিনি হারাগাছ থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে তার বিশেষ সখ্যতা থাকার অভিযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

পিবিআই ও নির্যাতিতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, রংপুর মহানগরীর হারাগাছ থানার ময়নাকুঠি কচুটারি এলাকার নবম শ্রেণীর ওই ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম। তিনি আগে হারাগাছ থানার এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরিচয়ের সময় রায়হান তার ডাক নাম রাজু বলে জানান ওই ছাত্রীকে। সম্পর্কেরে সূত্র ধরে রোববার সকালে ওই ছাত্রীকে রায়হান ডেকে নেয় নগরীর ক্যাদারের পুল এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার ভাড়াটিয়া সুমাইয়ার পারভীন ওরফে মেঘলা ওরফে আলেয়ার বাড়িতে। সেখানে প্রথমে রায়হান ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। পরে আরো কয়েকজন পরিচিত যুবককে অর্থের বিনিময়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করান। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সেখান থেকে বের হয়ে প্রথমে কোতয়ালী থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ ওই ছাত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থল বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সুমাইয়ার পারভীন মেঘলা ও শম্পা বেগমসহ থানায় নিয়ে যায়। খবর দেয়া হয় পরিবারকে।

এরই মধ্যে ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত এএসআই রায়হানুলকে বাঁচাতে টাকার দেনদরবার চলে থানা এলাকায়। বিষয়টি অবহিত হয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সেখানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা পাঠান। তার হস্তক্ষেপেই ছাত্রীর বাবা আয়নাল পুলিশ সদস্য রায়হান ও মেঘলাসহ অজ্ঞাত দু’জনসহ অন্যান্য অজ্ঞাতনামা সহযোগিদের নামে ধর্ষণ মামলা (নং ৩১) করেন। রাত পৌনে ১২টায় পুলিশ অসুস্থ্য ছাত্রীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের ১৩ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করায় পুলিশ। সকালে তাকে হাসপাতালের ওসিসিতে নেয়া হয়। সেখানে তার পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

ধর্ষিতার মা জানান, ‘মামলার আসামি ধরতে গিয়ে আমার মেয়ের সাথে পরিচয় এএসআই রায়হানুলের। তার পর থেকেই তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। আমার মেয়ের তার সাথে কথাবার্তা বলতো। কিন্তু তিনি যে আমার মেয়েকে নিয়ে গিয়ে এভাবে নির্যাতন করবে সেটা মেনে নিতে পারছি না। আমার মেয়ে ময়নাকুঠি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। সে পড়াশুনায় খুব ভালো ছিল। এখন আমার মেয়ের জীবন ধ্বংসকারী রায়হানুলসহ জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতার ও মৃত্যুদণ্ড চাই।’

এদিকে সচেতন নাগরিক কমিটি-রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, পুলিশের যে এএসআই ঘটনার মূল হোতা তাকে দুই নম্বর আসামি করায় প্রমাণিত হয় থানা পুলিশ প্রথমে রায়হানুলকে বাঁচানোর চেস্টা করেছিল। এজহারে সেভাবেই উল্লেখও আছে। কোনোভাবেই যেন এই পুলিশ সদস্য পার পেয়ে না যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকে। এছাড়াও তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যেই মামলাটি পিবিআইয়ে হস্তান্তর করায় আরপিএমপি পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলিম মাহমুদকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রমে পুলিশের প্রভাব থাকবে না বলে আমরা মনে করি। এছাড়াও তিনি এ ঘটানর দ্রুত ট্রাইবুনালে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবি জানান।


সর্বশেষ সংবাদ