‘বিয়ের প্রলোভনে’ যৌন সম্পর্ক কি ধর্ষণ, নাকি প্রতারণা?

প্রতীকী
প্রতীকী

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ‘বিয়ের প্রলোভনে’ ধর্ষণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা উচিত বলে মনে করেন অনেকে।উচ্চ আদালতের নির্দেশে ধর্ষণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ের অনুমতি নিয়েও নতুন করে আলোচনা হচ্ছে।

বাংলাদেশে সম্প্রতি আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ করা হলেও ধর্ষণের সংজ্ঞা একই আছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধারা ৯(১)-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘‘যদি কোন পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতীত [ষোল বছরের] অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করে, অথবা [ষোল বছরের] কম বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহা হইলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলে গণ্য হবেন।’’

এই আইনে স্পষ্ট যে ১৬ বছরের নীচে হলে নারীর সম্মতি থাকলেও তা ধর্ষণ। কারণ নারী প্রাপ্তবয়স্ক নয়। তার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়েও কিছুক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান মনে করেন, ‘‘ধর্ষণে যে জোরপূর্বক বা বলপ্রয়োগের বিষয় থাকে তা এখানে অনুপস্থিত। প্রেমের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে যখন শারীরিক সম্পর্ক হয় তখন সেটা ধর্ষণ নয়। কিন্তু পরে যখন বিয়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয় না তখন ধর্ষণ মামলা করা হয়। আমার বিচেনায় এটা প্রতারণা। আমার মনে হয় আইনে এটার ব্যাখ্যা এবং আলাদা শাস্তির বিধান থাকা উচিত।’’

তিনি বলেন, ‘‘ভারতীয় আদালতের রায়েও এটা পরিস্কার করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে প্রেমের সম্পর্কে পারস্পরিক সম্মতিতে দৈহিক মিলন হলে সেটা ধর্ষণ হবে না। আমাদের এখানেও আশা করি কোনো মামলায় আদালত এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন বা আইনের সংশোধন হবে।’’

মানবাধিকার কর্মী এবং মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘প্রেমের সম্পর্কে পারস্পরিক সম্মতিতে দৈহিক মিলনের পর বিয়ে করতে অস্বীকৃতি বড় ধরনের প্রতারণা। তবে আমার বিবেচনায় এটা ধর্ষণ নয়। বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে এই ধরনের প্রতারণার বিচার ও শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু যেহেতু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এটা ধর্ষণ তাই দণ্ডবিধির ওই ধারায় কেউ মামলা করেন না। সরাসরি ধর্ষণ মামলা করেন।’’

দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন, তবে অপরাধী সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, এই আইনটি মামলা দায়ের বা চার্জশিটের সময় বিবেচনা করা যায়। [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]