হত্যাকারীকে চিনবে না, তাই বেঁচে গেল মারিয়া!

শিশু মারিয়া
শিশু মারিয়া

গর্ভধারিনী মায়ের কোল হারা চার মাসের শিশু মারিয়া আরেক মায়ের মুখের দিকে সব সময় তাকিয়ে থাকছে। সে হাসছে, কাঁদছে, আবার সব কথা কান পেতে বেশ শুনছে। শুধু সে জানেনা সে হারিয়েছে তার জন্মদাতা বাবা ও মাকে। আরও এক ভাই এক বোনকে হারিয়ে সে এখন সর্বস্বহারা।

বৃহস্পতিবার ভোরে সাতক্ষীরার কলারোয়ার খলসি গ্রামের একই পরিবারের চার খুন ঘটনার পর শিশু মারিয়াকে ঘাতকরা নিহত মা ও ভাইবোনের পাশে রেখে যায়। সকালে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল শিশুটির দায়িত্ব গ্রহণ করে হেলাতলা ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে জিম্মায় দেন। এরপর থেকে সদস্য নাসিমা খাতুন মাতৃমমতা ও উষ্ণ আদর স্নেহে তাকে লালন করছেন।

হত্যাকারী রায়হানুলের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ভাই-ভাবী ও ভাইপো-ভাতিজিকে হত্যা করলেও শিশু মারিয়া কাউকে চিনবে না বলে তাকে হত্যা করেনি সে।

যেভাবে হত্যা: অবশেষে এক পরিবারের চারজনকে গলাকেটে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও তোয়ালে। বুধবার বিকেলে সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। সন্ধ্যায় রায়হানুলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি।

তিনি জানান, নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পারিবারিক কোন্দলে তাদেরকে হত্যা করে সে। গত ৯-১০ মাস আগে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। এজন্য সে বড় ভাইয়ের পরিবারের সাথে খাওয়া-দাওয়া করতো। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তার ভাবি সাবিনা খাতুন তাকে প্রায়ই গালমন্দ করতেন। এসব নিয়ে তার মধ্যে ক্ষোভ জন্ম নেয়। এক পর্যায়ে সে ভাবি সাবিনা খাতুনকে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য সে ১৪ অক্টোবর রাতে ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ ডিসোপেন ও স্থানীয় মুদি দোকান থেকে স্পিড (পানীয়) কিনে আনে। রাতে ভাত খাওয়ার পর কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তার ভাবী ও ভাইপো ভাতিজিকে খেতে দেয়।

রাতে হত্যাকারী রায়হানুল তার বড় ভাইয়ের ঘরে থাকা টিভিতে আইপিএল খেলা দেখছিল। রাত দেড়টার দিকে বড়ভাই শাহিনুর রহমান নিজ মাছের ঘের থেকে বাড়ি এসে দেখে ছোটভাই রায়হানুল তার ঘরে (বড় ভাইয়ের ঘরে) বসে টিভি দেখছে। এ সময় বড় ভাই শাহিনুর তাকে রাত জেগে টিভি দেখার জন্য বকাঝকা করে। বড়ভাই তকে গালমন্দ করে বলে ‘তুই বিদ্যুৎ বিল দিস না, টিভি দেখছিস কেন।’ এর জবাবে রায়হানুল ভাইকে বলে ‘এ মাসের বিদ্যুৎ বিল আমি দিয়ে দেব তুমি এই স্পিডটি খাও।’ বড়ভাই তখন তার দেওয়া স্পিডটি খায়। এরপর রাতের কোনো এক সময় সে ঘরের কার্নিস বেয়ে বড় ভাইয়ের ঘরের ছাদের উঠে যায়। পরে চিলে কোঠার (সিঁড়ির উপরের ছোট ঘর) দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রথমে বড় ভাইকে জবাই করে হত্যা করে। এ সময় মাথায় খুন চড়ে যায় তার। পরে পাশের ঘরে থাকা ভাবিকেও একইভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের সময় ভাবি চিৎকার দিলে ভাইপো-ভাতিজি জেগে ওঠে। তখন তাদেরকেও গলা কেটে হত্যা করে রায়হানুল। পরে সে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি বাড়ির পাশের বড় পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেয়।


সর্বশেষ সংবাদ