পরিবারের সবাইকে খুন করলেও যে কারণে হত্যা করেনি শিশু মারিয়াকে

শিশু মারিয়া ও তার নিহত বাবা-মা ও ভাই-বোন
শিশু মারিয়া ও তার নিহত বাবা-মা ও ভাই-বোন  © সংগৃহীত

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় খাওয়ার খোটা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে একই পরিবারের বড় ভাই শাহিনুরসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন ছোট ভাই খুনি রাহানুর রহমান। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন তার বড় ভাই, ভাবি, ভাইপো ও ভাতিজি।

এ ঘটনায় ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে। এতে রাহানুরের আঙ্গুলের ছাপ ও উদ্ধারকৃত আলামতের ছাপ মিলে যাওয়ায় তাকে এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনায় মা, বাবা, ভাই, বোন সবাইকে খুন করলেও শিশু মারিয়াকে খুন না করার কারণ বর্ণনা দিয়েছে নিহতের ভাই খুনি রাহানুর রহমান।

রাহানুরের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, রাহানুর বেকার ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় খাওয়ার খোটা দিয়ে তাকে ব্যাপক গালমন্দ করে ভাবী সাবিনা খাতুন। তখনই সে ভাবীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। রাতে টিভি দেখার সময় বিদ্যুৎ বিল বেশি হবে বলে তাকে বকা দেয় বড় ভাই শাহিনুর। এ সময় সে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকেও হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে সে কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভাই ও ভাবীকে খাওয়ায়। রাতে দরজা না দিয়ে বাইরের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে শাহিনুরসহ পরিবারের সবাই ঘুমাতে যায়।

তার নিহত বাবা-মা ও ভাই-বোন
তার নিহত বাবা-মা ও ভাই-বোন

 

তিনি আরো জানান, রাতের শেষ ভাগে রাহানুর গাছ বেয়ে চিলে কোটা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে ঘুমন্ত ভাই ও ভাবীকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। এ সময় ভাইপো সিয়াম ও ভাতিজি তাসনিম জেগে গেলে তাদেরকেও হত্যা করে। পরে সে চাপাতি পুকুরে ফেলে গোসল করে ঘুমাতে যায়। তবে ‘৬ মাস বয়সী শিশু মারিয়া এ ঘটনা কাউকে জানাতে পারবে না’ বলে তাকে হত্যা করেনি বলে জানায় সে।

এ ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশু মারিয়া এখন কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার নাসিমা খাতুনের কাছে রয়েছে।

এ ঘটনায় নাসিমা খাতুন বলেন, ‘ নিজ সন্তানের মতো তাকে লালন করছি। ঘটনার দিন মায়ের পাশে থাকার কারণে সে রক্তাক্ত ছিল। সম্ভবত সে দুধ মনে করে রক্ত খেয়েছিল। যে কারণে কয়েকদিন তার পেটে সমস্যা ছিল। এখন সুস্থ। খেলা করে, হাসে। ক্ষুধা পেলে খাওয়ার জন্য ইঙ্গিত দেয়। আমি তার ভাষা বুঝে নিয়েছি। সবার দোয়ায় তাকে আমি মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো।'

তিনি আরো বলেন, শিশুটি রাতে ঘুমের মধ্যে কাতরে উঠে। আমি তাকে বুকের উপরে রাখি বলে সেই কান্না অনুভূতি বুঝতে পারি। কান্নার মধ্যে বোঝা যায় তার কষ্ট। ওই দিন রাতে সব কিছু তার সামনে ঘটেছে কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না।

রাহানুরের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, ভাই-ভাবীকে হত্যার পরিকল্পনা থাকলেও বাচ্চাদের হত্যার পরিকল্পনা তার ছিল না। তারা জেগে চিৎকার করতে থাকে বলে তাদের হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডে সে একাই ছিল। মারিয়া শিশু হওয়ায় তাকে কোমল পানীয় পান করানো হয়নি। ‘৬ মাস বয়সী শিশু মারিয়া এ ঘটনা কাউকে জানাতে পারবে না’ বলে তাকে হত্যা করা হয়নি বলে জানায় সে। 

সিআইডি সাতক্ষীরা অফিসের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান বলেন, আমার চাকরি জীবনে এই রকম অপরাধী আগে কখনো দেখিনি। এ ঘটনার পর দুই দিন সে ঘুমায়নি। তারপরও জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বাভাবিক। সে কোনওভাবে বুঝতে দেয়নি এই বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে।


সর্বশেষ সংবাদ