স্কুল শিক্ষিকা সৎ মায়ের অকথ্য নির্যাতনে ভারসাম্যহীন শিশুটি!
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার রূপনগর আবাসিক এলাকায় এক শিশুকে তার সৎ মা স্কুল শিক্ষিকা লাভলীর নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিশুটি অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জামাল হোসেনের কন্যা ইসরাত জাহান তিথি ওরফে মনি। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন নিয়ে ১০ দিন ধরে খালু সামসুল হক ভূইয়ার ঘোষনগর গ্রামের বাড়িতে থাকার পর মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের হেফাজতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
জানা যায়, দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা গ্রামের মো. জামাল হোসেন ২০১০ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। ২০১৫ সালে তিথির মা মারা গেলে তিনি লাভলী আক্তার নামে এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন। তাদের একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর জামাল হোসেন চান্দিনা পৌর এলাকার রূপনগর আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন।
তিথি দেবিদ্বার উপজেলার বাগমারা আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত। এরমধ্যে ২০১৮ সালে হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এতে কিছুটা সুস্থ হলেও সেসময় সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া তিথির লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।
তিথির খালু সামসুল হক ভূঁইয়া জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ত্র মামলায় তিথির বাবাকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর তিথির কপালে নেমে আসে দুর্ভোগ। এসময় তাদের সাথে তিথির পরিবারের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। গত ২ অক্টোবর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেবিদ্বার উপজেলার কটকসার গ্রামে মেয়েকে নিয়ে তার আরেক খালার বাড়িতে যান। ফেরার পথে তারা তিথিকে দেখার বায়না ধরলে রূপনগর বাসায় তাদের নিয়ে যান।
এসময় তিথির সৎ মা লাভলী জানায়, সে অসুস্থ। এ কথা জানার পর তাকে ময়নামতি সেনানিবাস সংলগ্ন ঘোষনগর গ্রামের বাসায় নিয়ে আসেন তার খালু। পরদিন তিথিকে গোসল করানোর পর কাপড় পরিবর্তনের সময় তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান তিথির খালাতো বোন। পরিবারের অন্য সদস্যদের জানালে আশপাশেও ছড়িয়ে পড়ে বিষয়টি। এক সময় সেটি স্থানীয়রা জানলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিন তিথির খালুর বাসায় গিয়ে সংবাদকর্মীরা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া শিশুটি সাড়া দেয়নি। তার খালাতো ভাই নাজমুল হাসান ও প্রতিবেশী মামা হুমায়ুন কবীরসহ স্থানীয়রা জানান, তিথির হাত, পা, পিঠসহ বিভিন্নস্থানে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তারা এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। এরইমধ্যে ফেসবুকে ঘটনা জানাজানি হলে তিথির সৎ মা লাভলীর সাথে সাংবাদিকরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামসুদ্দিন মো. ইলিয়াস বলেন, চান্দিনা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে শিশুটির বিষয়ে জানানো হলে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। বর্তমানে তারাই শিশুটির দেখভাল করছেন। তিথির খালু সামসুল হক ভূঁইয়া বাদী হয়ে স্কুল শিক্ষিকা লাভলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ তাকে আটকের চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।