১৪ অক্টোবর ২০২০, ১০:২৮

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরকীয়া, যৌতুক, প্রশ্নফাঁসের মামলা সাবেক স্ত্রীর

মোফাজ্জল হোসেন  © সংগৃহীত

বগুড়ায় এক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। মোফাজ্জল হোসেন নামে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, প্রাইমারি স্কুলের প্রশ্নফাঁস, জুয়ার আসরে বসাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার এই অভিযোগ তুলেছেন তার সাবেক স্ত্রী শিউলি সুলতানা।

এ অভিযোগে মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এ একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি সাক্ষী, আমার সামনে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিক্রি করেছে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের সাথে প্রতারণা করে অবৈধ সম্পর্ক করা তার নেশা। কিছুদিন আগে একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকাকে এভাবে বিয়েও করেছিলেন।’

শিউলী সুলতানা বলেন, তার মোবাইল ফোন দেখলে অসংখ্য অপরাধের আলামত মিলবে। বগুড়ার কাহালু উপজেলার আয়রা গ্রামে বাড়ি মোফাজ্জল হোসনের। বর্তমানে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।

২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ও ৪ ধারায় দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে শিউলী সুলতানার সাথে মোফাজ্জল হোসেনের বিয়ে হয়। সে সময় শিউলীর পরিবার থেকে ছয় ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং এক লাখ টাকা উপঢৌকন হিসেবে দেয়া হয়। তাদের বিবাহিত জীবন ভালোই চলছিল। এর মধ্যে তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তানও জন্ম নেয়। কিছুদিন পর থেকে নতুন করে যৌতুক চেয়ে স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন স্বামী।

বিয়ষটি শিউলী তার বাবাকে জানালে বাবা অনেকবার বুঝিয়েছেন মোফাজ্জলকে, কিন্তু কাজ হয়নি। এর মধ্যে বিভিন্ন নারীর সাথে আপত্তিকর ছবি তুলে দেখিয়ে হুমকি দেন ‘যৌতুকের টাকা না দিলে আমি বিয়ে করবো, অনেক সুন্দরী আমার জন্য বসে আছে।’ শারীরিক নির্যাতনও করা হতো। এক পর্যায়ে ২০০৭ সালের শেষ দিকে মোফাজ্জল রিক্তা নামের একজন প্রাইমারী শিক্ষিকাকে বিয়ে করেন স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই।

কিছুদিন পর দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছেও যৌতুক দাবি করতে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে একপর্যায়ে সম্পর্কের অবনতি হলে মোফাজ্জল রিক্তা নামের ওই শিক্ষিকাকেও তালাক দেন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করার পর শিউলী নারী শিশু আইনে তখনও একটি মামলা করেছিলেন। পরে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর সেই মামলা নিষ্পত্তি হয়। সম্প্র্রতি আবারো পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক চেয়ে শিউলীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন মোফাজ্জল। এক পর্যায়ে শিউলীকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে বাবার বাড়িতে চলে যান।

শিউলীর বাবা বিষয়টি মীমাংসার জন্য তার বড় ভাই এবং পাড়ার লোকজন নিয়ে বসলে সেখানেও টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে শিউলীর বাবা সময় চেয়ে টাকা দিতে রাজিও হন। কিন্তু মোফাজ্জল বৈঠকেই পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় শিউলীতে তালাক দেন মোফাজ্জল। তিনি এখন তৃতীয় বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান শিউলী সুলতানা।

এ বিষয়ে মোফাজ্জল হোসেন গণমাধ্যমের নিকট দাবি করেন, ‘এসব সাজানো নাটক। আমি শ্বশুরের জমি ক্রয় করার জন্য টাকা দিয়েছি। তিনি আর পরে জমি লিখে দেননি। সেই টাকা ফেরত চাইলে তারা নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে।’ তিনি প্রশ্ন ফাঁস এবং নারীদের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িত নন বলেও দাবি করেন।