সামাজিক মাধ্যমের ধর্ষণ হুমকিতেও রয়েছে কঠোর শাস্তি
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ধর্ষণে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে শনিবার ঢাকার খিলক্ষেত থেকে একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারা বলছে, ওই যুবক ছাড়াও আরো কয়েকটি ফেসবুক আইডি তাদের নজরদারিতে আছে যেখান থেকে ধর্ষণের হুমকি বা ধর্ষণকে সমর্থন করে পোস্ট বা কমেন্ট করা হয়েছে।
র্যাবের কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, র্যাবের পক্ষ থেকে অনলাইন মনিটরিং-এর জন্য একটি সেল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে তারা দেখতে পেয়েছেন, ফেসবুকে বিভিন্ন সময় নারী মডেল, সেলিব্রেটি ও লেখকের পোস্টে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। বর্তমানে যারা ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন করছেন তাদের নিয়েও বেশ কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ও অনলাইনে নারীদের এভাবে ধর্ষণের হুমকি দেয়া, আক্রমণাত্মক বা অপমানজনক মন্তব্য করা বা কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাব দেয়ার নজির হরহামেশাই শোনা যায়।
বিশেষ করে কোনো ফেসবুক গ্রুপে বা পেইজে অথবা সংবাদমাধ্যমগুলোর পোস্টে কোনো নারীর কমেন্টের বিপরীতে প্রায়ই এধরনের মন্তব্য চোখে পড়ে। দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা পুলিশের কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন না।
তবে আইনজীবীরা বলছেন, অনলাইনে এ ধরণের হুমকি এবং হয়রানির ক্ষেত্রে সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ীও অভিযোগ করার বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব?
অনলাইনে এধরণের হয়রানিমূলক আচরণের শিকার হলে তথ্য-প্রমাণসহ সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন আইনজীবী মিতি সানজানা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আইনে কাউকে কোনো হুমকি দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ইচ্ছাকৃত বা অজ্ঞাতসারে অন্য ব্যক্তির জন্য আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক কোনো তথ্য প্রকাশ করেন, অথবা এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করেন যা অন্য ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারে এবং মিথ্যা জানা সত্বেও অন্যদেরকে অপমান, অপদস্থ, বিরক্ত বা হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কোনো মন্তব্য করা হলে তার কারাদণ্ড ও জরিমানা করার বিধান রয়েছে।’
আইন অনুযায়ী এরকম ক্ষেত্রে তিন বছরের কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা শাস্তির বিধান রয়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়া এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে, অর্থাৎ অনলাইনে এই ধরনের কন্টেন্ট ছড়িয়ে দিতে থাকলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও দশ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তির বিধান রয়েছে বলে জানান মিতি সানজানা। তিনি বলেন, এরকম ক্ষেত্রে নিকটস্থ থানায় সরাসরি অভিযোগ করে, সাইবার ইউনিটে মেইল করে এবং কাউন্টার টেররিজম বিভাগের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপের মাধ্যমেও অভিযোগ করা সম্ভব।
ই-মেইল এবং অ্যাপে অভিযোগ করার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী নিজের পরিচয় গোপন রেখেও অভিযোগ দায়ের করতে পারেন বলে জানান মিতি সানজানা। তবে তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগ করা উচিত এবং অভিযোগের পক্ষে কিছু তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে রাখা ভালো।
‘স্ক্রিনশট, লিঙ্ক, অডিও-ভিডিও ফাইল বা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ অভিযোগ করা প্রয়োজন। আর স্ক্রিনশটের ক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দেই যেন অ্যাড্রেস বারের ওপর যে ইউআরএল দেখা যায়, সেটিও যেন স্ক্রিনশটে থাকে।’
অনলাইনে কোনো ব্যক্তিকে সরাসরি এধরনের আক্রমণ না করে পরোক্ষভাবে আক্রমণ করা হলেও আক্রমণকারীকে আইনের আওতায় আনার সুযোগ রয়েছে বলে জানান মিতি সানজানা।
‘প্রত্যক্ষভাবে না করেও কেউ যদি এমন কোনো মন্তব্য করেন যেখানে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে কাকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করা হয়েছে, সেক্ষেত্রেও মানহানি হওয়া বা সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত হলে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে।’
তিনি জানান, অনলাইনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো সংবাদমাধ্যম বা পাবলিক প্ল্যাটফর্মে এ ধরনের মন্তব্য করা হলে ওই প্ল্যাটফর্মের কর্তৃপক্ষ অথবা যে ব্যক্তির উদ্দেশ্যে মন্তব্য করা হয়েছে, সেই ব্যক্তিরও আইনি পদক্ষেপ নেয়ার অধিকার রয়েছে। সূত্র : বিবিসি