১৭ বছরেও এসএসসি পরীক্ষার্থীকে খাতা দেখাতে পারেনি শিক্ষা বোর্ড!
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২০, ১২:১৯ PM , আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০, ১২:১৯ PM
২০০৪ সালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মুস্তারী জাহান। তবে ফেল করায় উত্তরপত্র দেখার দাবিতে মামলা করেন তিনি। কিন্তু খাতা না দেখাতে মামলাটি হাইকোর্টে নিয়ে যায় শিক্ষা বোর্ড। পরে মামলাটি ফের নিম্ন আদালতে ফেরত যায়। এভাবে ১৬ বছর পার হয়ে ১৭ বছরে গিয়ে ঠেকলেও সেই খাতা দেখানো হয়নি মুস্তারীকে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার তেঁথুলিয়া গ্রামের মুনসুর রহমানের মেয়ে মুস্তারী। তেঁথুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। এতে তাঁকে অকৃতকার্য দেখানোয় মামলা করেন বাবা মুনসুর। এতে বলা হয়, ২০০৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় ২৬ জুন। এসময় মুস্তারী খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করলেও কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে ১ নভেম্বর মামলা করেন।
বিদ্যালয়ের নির্বাচনী পরীক্ষায় মুস্তারী ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করলেও ওপরের কভার ঠিক রেখে উত্তরপত্র বদল করার তাঁর ফলাফল অকৃতকার্য এসেছে বলে দাবি করা হয়। জানা গেছে, মামলায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ও বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে। আগামী মাসের ১ তারিখ মামলাটির বয়স হবে ১৭ বছর। এছাড়া আগামী ২০ জানুয়ারি মামলাটির পরবর্তী দিন ধার্য করা রয়েছে।
মুস্তারী দাবি করেন, খারাপ শিক্ষার্থী প্রমাণের জন্য পরেরবারও উত্তরপত্র পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। এতে তাঁর ফলাফল খারাপ হয়, কোনোমতে পাস করেন। পরে হতাশ হয়ে উচ্চমাধ্যমিকে মানবিক বিভাগ থেকে এ গ্রেড পেয়ে পাস করেন। এতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে না পেরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি এই আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান বলে জানিয়েছেন।
মুনসুর রহমান জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে উত্তরপত্র হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উত্তরপত্র নষ্ট না করার আদেশ দেন। এ জন্য ট্রাংক ও তালাচাবি কেনার জন্য নির্ধারিত ফি দিয়েছেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন করে শিক্ষা বোর্ড। সেখানেও বহাল থাকে নিম্ন আদালতের আদেশ। পরে শিক্ষা বোর্ড আপিল বিভাগে গেলে ২০০৯ সালের ১২ মার্চ নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল রেখে উত্তরপত্র হাজির করতে বলেন আপিল বিভাগ।
এর সাত বছর পর ২০১১ সালে শিক্ষা বোর্ড আদালতকে জানায়, শিক্ষা বোর্ডে উত্তরপত্র ছয় মাসের বেশি সংরক্ষণ করা হয় না। পরে আদালত বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি হাজির হতে পাঁচ বছর সময় নেন। তারপরও খাতা দেখানো হয়নি। বর্তমানে ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে এটি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। বাদীপক্ষ এজন্য তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
জানা গেছে, সাবালিকা হওয়ার পর মামলার বাদী হন মুস্তারী। তিনি বলেন, চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু এভাবে তাঁর শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মামলার পরের বছর তাঁকে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে বাধা দেওয়া হয়। উপায় না দেখে রসায়ন পরীক্ষার আগে ইউএনওকে জানান। পরে ইউএনও তাঁকে একা একটি বেঞ্চে বসিয়ে আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ইউএনও পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের বারান্দার নিচে বসেছিলেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এটা অনেক আগের কথা, তাঁর সময়ে হয়নি।’ আর বিবাদীপক্ষের আইনজীবী এজাজুল হক জানান, আদালত যে রায় দেবেন, তা তাঁরা মেনে নেবেন।