সেলফি তোলার কারণ জানিয়ে এবার উল্টো প্রশংসায় ভাসছেন সেই এএসপি

আসামী দেলোয়ারের সঙ্গে সেলফি
আসামী দেলোয়ারের সঙ্গে সেলফি

নোয়াখালীতে গৃহবধূ নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন আসামী দেলোয়ার। ০৫ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে তাদের গ্রেফতার করা হয় তাকে। এদিকে দেলোয়ারকে গ্রেফতারের পর তার সঙ্গে পুলিশের তোলা হাসিমাখা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে সমালোচনায় শামিল হয়েছেন ফেসবুকের অনেকেই। তারা বলছেন, কুখ্যাত এমন আসামীর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন ছবি তোলা বেমানান।

তবে ছবি তোলার নেপথ্য কারণ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন পিপিএম। যা পড়ে অনেকেরই বাহাবা পেয়েছেন সেলফি তোলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এসএসপি নাজমুল হাসান।

স্ট্যাটাসে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন লিখেছেন, ‘‘এএসপি নাজমুল, আমার প্রিয় সহকর্মী। র‍্যাব-১১ আমার দ্বিতীয় কর্মস্থল আর তার প্রথম। আমার সাথেই তার কর্মজীবন শুরু। অনেক দু:সাহসিক অভিযানে আমার সহযোদ্ধা। ইতোমধ্যে বদলি হয়ে গেছে। কয়েক দিন পর হয়তো নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে চলে যাবে। নিজের কথা নয়, তার কথা বলছি। দায়িত্ব নিয়েই বলছি। র‍্যাবের কর্মজীবনে এক বিন্দু অনিয়ম সে করে নি। তার তোলা আসামীর সাথে আমাদের ছবি নিয়ে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। তাতে দু:খ নেই। আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে বিনীত অনুরোধ, মর্মাহত হোন, তবে বিস্তারিত জেনে হোন।

আপনারা জানেন, নোয়াখালীর এখলাশপুরে সংঘটিত নারীর প্রতি বীভৎস ও লোমহর্ষক যৌন হয়রানির ভিডিও প্রকাশের পর দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। নৃশংস ঘটনায় যেকোন মানবিক মানুষের মত আমাদের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ হয়েছে। নোয়াখালী জেলা র‍্যাব-১১ এর অধিক্ষত্রে হওয়ায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করি। সেদিন মধ্য রাতে গোপন সূত্রে জানা যায়, উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ার নোয়াখালী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। কিন্তু তার ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনার বীভৎসতা ও নৃশংসতা বিবেচনা করে আমাদের অভিযানের প্রতিটি সদস্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে শত কষ্ট মেনে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মত দেশের ব্যস্ততম পথে চেকপোস্ট বসিয়ে বাস তল্লাসি শুরু করি। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন সহকারি পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রায় ৩ঘন্টা বাস তল্লাশি করে রাত আনুমানিক ২:৩০ মিনিটে সন্ত্রাসী দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়। (ছবিতে একজন অফিসারে গায়ে রিফ্লেক্টিং ভেস্ট দেখুন) প্রত্যেকটি ক্লান্তিকর ও কষ্টসাধ্য অভিযানের পর সফলতা আসলে আমাদের সকল শ্রম, শত কষ্ট নিমিষেই হারিয়ে যায়।

আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল, অভিযুক্ত দেলোয়ার ঢাকায় গিয়ে প্রধান আসামী বাদলের সাথে দেখা করবে। তাই আমাদেরও প্রধান টার্গেট বাদল। কিন্তু দেলোয়ারের সহযোগিতা ছাড়া ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা বাদলকে গ্রেফতার কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। এদিকে আমাদের হাতে আটক দেলোয়ার যখন জানতে পারল আমরা র‍্যাবের সদস্য, তখন সে মৃত্যু ভয়ে কাঁপছে। তাছাড়া আমাদের দুইজন জুনিয়রের আগ্রাসী আচরণে সে আরো ভীত হয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিল না।

তখন আমরা দেলোয়ারকে পিছন থেকে সামনের সিটে এনে আমাদের মাঝখানে বসাই। গাড়ি তখন ঢাকার দিকে। বাদলের অবস্থান জানার জন্য তার সাথে উপস্থিত বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার আলোকে নানামুখী কৌশল অবলম্বন করা হয়। দেলোয়ার বিশ্বাস করতে পারছিল না, সে বেঁচে থাকবে। আমরা তার আস্থা অর্জনের জন্য চলন্ত গাড়িতে যা কিছু বলা যায়, কিংবা করা যায়, তাই করেছি। তার মধ্যে এই ছবি তোলাও একটি। এবং শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি। র‍্যাব-১১ এর কর্মজীবনে এর চেয়ে বহু দু:সাহসিক অভিযান আমরা করেছি। নিষ্ঠা ও সততার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। ভবিষ্যতেও তাই করে যাব। সামগ্রিক ৮ঘন্টা অভিযানের মধ্যে নেয়া আসামীর সাথে একটি ছবি আপনার মনে আঘাত দিয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে দু:খ প্রকাশ করছি।’’

এর আগে সেলফি তোলা ওই কর্মকর্তা এএসসি নাজমুল হাসান তার ফেসবুকে লিখেন, ‘আপনারা সকালে ঘুম থেকে উঠে সুসংবাদ শুনতে চেয়েছিলেন তাই আমরা রাতে ঘুমাইনি। দীর্ঘ ৩০ ঘন্টার নির্ঘুম অভিযান শেষে আমরা সফল হয়েছি। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এ ঘটে যাওয়া নৃসংশ বর্বরোচিত ঘটনার দগদগে ক্ষত আমরা মুছে দিতে পারব না; কিন্তু যত কষ্টই হোক এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে একবিন্দু ছাড় দেয়া হবে না। দিন রাত এক করে শ্রম দিয়ে যাওয়ার জন্য নোয়াখালী জেলা পুলিশকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

এদিকে পুলিশের এই স্ট্যাটাসটি পড়ে অনেকেই অনেকেই তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আব্দুল আজিম নামে একজন লিখেছেন, ‘অপরাধীদের তথ্য জানার জন্য কিছু কৌশল করতে হয়। আপনি তাই করেছেন। পাশে লোকে কিছু বলে। আপনি আপনার সফল অভিযান চালিয়ে যান।আল্লাহ সহায়তা করবেন।’

আব্দুর রহমান বলেছেন, অন্যের সমালোচনা করা যত সহজ নিজের আত্মবিচার করা তত কঠিন।আপনাদের জন্য সব সময় শুভ কামনা, আপনারা একদিন বিশ্রাম নিলে এই সকল চেতনাবাজদের ঘুম অতিষ্ট হয়ে যাবে। আপনারা জেগে থাকেন, অভিযান চালান তাই এরা নিশ্চিন্ত হয়ে সমালোচনা করতে পারে। তাদের কাজই এটা, ইগনোর করেন, ইগনোর।


সর্বশেষ সংবাদ