মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ ঢাবির, কড়া নজরদারিতে অভিযুক্তরা
মাদক বিক্রি, সেবন এবং পরিবহনের কারণে গত এক মাসে আট জনকে থানায় সোপর্দ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় গত সেপ্টেম্বর মাসে তাদেরকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান থেকে ধরা হয়। আটককৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের গতিবিধির প্রতিও কড়া নজর রাখছে প্রশাসন। এছাড়াও ক্যাম্পাসে মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ থানার তথ্যমতে, গত মাসে বিভিন্ন অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে ১৩ জনকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এদের মধ্যে আট জনের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতা ছিলো। আটককৃতদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন। তাছাড়া রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র দু’জন ও তাদের সাথে থাকা এক বন্ধু। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ভিন্ন ইনস্টিটিউটের দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং বাকি দু’জন বহিরাগত।
এছাড়াও চলতি মাসের ১ অক্টোবর পুলিশ নীলক্ষেত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের মালি সুমন রায় এবং লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের মালি আকতার হোসেনকে নীলক্ষেত থেকে মাদকসহ হাতেনাতে আটক করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মাধ্যমে তাদেরকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়।
এদিকে, মাদক সংশ্লিষ্টায় গ্রেফতার ও আটক হওয়াদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ প্রশাসন। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের প্রতি কড়া নজর রাখছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেকোনো সময় আইনশৃংখলা রক্ষা বাহিনীর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সূত্রমতে, বর্তমানে চার ধরনের লোক ক্যাম্পাসে মাদকের সাথে যুক্ত। এদের মধ্যে রয়েছে পেশাজীবী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মচারীও রয়েছেন। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির কিছু চিহ্নিত কর্মচারী ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন সময় সুযোগের চেষ্টা করে থাকে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
ভ্রাম্যমাণ কিছু ব্যক্তি এবং ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমাণ দোকান, হকার এবং কিছু কিছু রিকসাচালকের মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ রয়েছে। এছাড়াও মাদকের সাথে যুক্ত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে যেমন মাদকসেবী রয়েছে, তেমনি রয়েছে মাদক ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরাও। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের যারা মাদকাসক্ত তাদেরকে কাউন্সিলিংয় করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং বিভাগের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তাদের কাউন্সিলিং করবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
তবে আটক হওয়াদের কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোবাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আরিফুর রহমান সরদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মৌখিকভাবে এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। নাম ঠিকানা নিয়ে আসলে বলা যাবে।
গত মাসে মাদকসেবনের স্পট হিসেবে চিহ্নিত ক্যাম্পাসে চারটি জায়গায় ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। এসব স্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরদারিতে থাকবে। এছাড়া ভবিষ্যতেও সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের একটি নির্দিষ্ট জায়গা, শহীদ মিনার এলাকা, টিএসসি এলাকা এবং কার্জন হল এলাকা। এছাড়াও ক্যাম্পাস খোলা থাকা অবস্থায় বিভিন্ন হলের ছাদে মদ-গাঁজা খাওয়ার তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রয়েছে। ক্যাম্পাস খোলা হলে সেখানেও আকস্মিক অভিযান চালাবে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসে যে কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য বহন এবং বিপণন নিষিদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তাগিদ পেয়েছি। আমদের প্রত্যাশা, ক্যাম্পাসে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বজায় থাকবে। তাই আমরা চাই মাদকসেবী এবং মাদক কারবারীরা যেন আমাদের ক্যাম্পাসকে তাদের কাজের স্থল হিসেবে ব্যবহার না করে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
ক্যাম্পাসে মাদক নিয়ন্ত্রণে আনার সাথে সাথে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বারোপ করেন তিনি বলেন, বহিরাগতদের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে টহল অব্যাহত রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম। নিয়মিত মাইকিং করে নির্দিষ্ট সময়ের পরে বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যেতে বলা হচ্ছে। করোনাকালীন কারো মাস্ক না থাকলে তাদেরকেও ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যেতে বলা হচ্ছে। এই মহামারীর সময়ে আমাদের স্লোগান হলো- ‘আমি ভালো থাকি, আপনাকেও ভালো রাখি’।
মাদক নির্মূলে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে ঢাবি প্রক্টর বলেন, মাদকসক্তি একটি সামাজিক ব্যাধি। তাই সামাজিকভাবেই মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সবার আন্তরিকতা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।