রেহাই পাননি গৃহবধূর স্বামীও, দেড় হাজার টাকায় ছাড়িয়ে আনেন ভাই
নোয়াখালীতে এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। তবে ঘটনার দিন শুধু ওই নারীই নয়, তার স্বামীও নির্যাতনের শিকার হন। তাকে আটক করে নিয়ে যায় বখাটেরা। পরে দেড় হাজার টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন ওই নারীর ভাই।
এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে মাঠে সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের নির্দেশে পুলিশের পাঁচটি টিম মাঠে কাজ করছে। পুলিশ সুপার নিজেই অভিযান তদারকি করছেন বলে জানা গেছে।
নির্যাতনের শিকার নারীর বক্তব্য ও আটককৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছিল অন্তত পাঁচজন। তারা হচ্ছেন দেলোয়ার, বাদল, কালাম, আব্দুর রহিমসহ অপর একজন। আব্দুর রহিমকে (২২) ছাড়াও মো. রহমত উল্যাহ নামে আরও একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ওই ঘটনায় অভিযুক্তরা সরকারদলীয় কয়েকজন নেতার প্রশ্রয়ে এলাকায় মাস্তানি করে বেড়ায়। তারা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যাসহ মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
একলাশপুর ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় কয়েক বছর আগে তিনি বাপের বাড়ি চলে আসেন। তাঁর এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে ওই নারী ছেলে ও এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি তাঁর স্বামী তাঁর কাছে আসা-যাওয়া করতে শুরু করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন যুবক আপত্তি জানিয়ে সেদিন ওই নারীকে নির্যাতন করেন। ঘটনার দিন ওই নারী তাঁর স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনকারীরা তাঁর স্বামীকেও আটক করে নিয়ে যায়। পরে ওই নারীর ভাই এক হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন। ওই নারীর মা নেই। বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন।’
ওই নারী পুলিশকে জানান, বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের বড়খালের পাশে নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার এতে নেতৃত্ব দেয়। ঘটনায় জড়িত ছিল বাদল, কালাম, আব্দুর রহিমসহ অপর একজন। তারা ভিডিও প্রকাশ করে দেবে বলে ভয়ে ছিলেন তিনি।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে অভিযুক্তরা তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে থাকে। এসময় তিনি নিজেকে রক্ষায় সব ধরনের চেষ্টা করেন। এমনকি হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডেকে, পায়ে ধরেও রক্ষা পাননি। বরং দেলোয়ার তার মুখমণ্ডলে লাথি মারে। এছাড়া পা দিয়ে মুখসহ তার শরীর মাড়িয়ে দেয়। ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চিৎকার করে আরেকজন।