০৪ অক্টোবর ২০২০, ০৭:৪০

বিস্ফোরক পরিদফতর পরিদর্শক রবের অবৈধ সম্পদের পাহাড়

আব্দুর রব  © সংগৃহীত

বিস্ফোরক পরিদফতরের পরিদর্শক মো. আবদুর রবের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে দুদক বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে এর সত্যতাও পেয়ে তদন্ত দল।

জানা গেছে, বিস্ফোরক অধিদফতরের পরিদর্শক রব দুর্নীতির মাধ্যমে বিস্ফোরক আমদানি ও পরিবহনের লাইসেন্স দেয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক সুবিধা দিতেন। এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরিদর্শক রবের রাজধানীতে ৮তলা ভবনসহ ৫২ স্থানের জমি ক্রোক (অ্যাটাচমেন্ট) এবং ব্যাংক হিসাবে থাকা সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) আবেদন করেছে সংস্থাটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওইসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্তকারী কর্মকর্তারা অভিযুক্তের অবৈধ সম্পদগুলো ক্রোকের উদ্যোগ নেন। যাতে তারা ওইসব সম্পদ বেহাত করতে না পারেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। হয়তো তার (আবদুর রব) অনুসন্ধানটিও শেষ হয়েছে। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা শেষে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

দুদক ও আদালত সূত্র জানা গেছে, দুদক কার্যালয়ে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আবদুর রবের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করা হয়। আবদুর রবের বিরুদ্ধে দুদকে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, ঘুষ গ্রহণ করে বিস্ফোরক আমদানি ও পরিবহনের লাইসেন্স দেয়া এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে মাসোহারা আদায় করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি।

রবের অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি : দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি দুই দফায় আবদুর রবের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ফ্রিজের আদেশ দেন আদালত। আদালতে করা দুদকের আবেদনে বলা হয়, আবদুর রব এসব সম্পত্তি ও ব্যাংকে জমানো টাকা ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। তার এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত। আবদুর রবের এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক ও ফ্রিজ করা না হলে অনুসন্ধান শেষের আগেই হস্তান্তর বা বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং বিচারকাজে এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হবে না।

প্রথম ধাপে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড প্রণীত নকশায় কল্যাণপুর ২নং প্রজেক্টের প্লট নং বি-১৬’র সাড়ে ৩ কাঠা জামির ওপর নির্মিত আটতলা ভবন ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে সোনালী ব্যাংকের সেগুনবাগিচা শাখার ব্যাংক হিসাবে (হিসাব নম্বর ৪৪৩২১৩৪০৪১১৪৫) থাকা ৩৫ লাখ ৫৩ হাজার ১৬৮ টাকা ফ্রিজেরও আদেশ দেয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে আবদুর রবের নিজ নামে থাকা রাজবাড়ী জেলার সদর, পাংশা ও বালিয়াকান্দি থানা এলাকায় ৫১ স্থানে থাকা সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। এগুলো হল- রাজবাড়ীতে রেজিস্ট্রিকৃত সাফ কবলা দলিলে পুরান শিকজান মৌজায় ৬ শতক, ১১ শতক, ২১ শতক, ১৭ শতক, ৬৯ শতক, ৯ শতক, ২৫ শতক, ২৯ শতক, ২৮ শতক, ৫৬ শতক, ১০ শতক, ২২ শতক, ৪০ শতক, ৮৪ শতক, ১২ শতক, ২২ শতক, ১১ শতক, ১৭ শতক, ২৮ শতক ও ২০ শতক। বসুন্দিয়া মৌজায় ১৮ শতক, ৩৪ শতক, ২২ শতক, ৯ শতক, ৫ শতক, ১১ শতক, ১০ শতক, ২৪ দশমিক ৫০ শতক, ৩ দশমিক ৫০ শতক ও ১ দশমিক ২২ একর। বিলনৌছি মৌজায় ৮০ শতক ও ৩৩ শতক। নিয়ামতপুর মৌজায় ১৪ শতক। ভবানীপুর মৌজায় ৫ শতক, ৯ দশমিক ৮৬ শতক, ৬ শতক, ৮৯ শতক, ৬ দশমিক ৬২ শতক, ৪৮ শতক, ৩ দশমিক ৫৬ শতক ও ৪ দশমিক ৫০ শতক। রাইনগর মৌজায় ১৮০ শতক, ৮ শতক, ১২৪ দশমিক ৬৬ শতক, ৯ দশমিক ৫০ শতক, ১১ শতক, ৮ দশমিক ৫০ শতক, ১১ শতক, ২৪ দশমিক ৩৪ শতক ও ২৩ শতক এবং সোনাপুর মৌজায় ৩ দশমিক ২৫ শতক সম্পত্তি।

দুদক যেসব সম্পত্তি ক্রোক করেছে তা আইন সম্মত হয়নি বলে দাবি করেছেন বিস্ফোরক পরিদর্শক আবদুর রব। তিনি বলেন, এসব আমার বৈধ সম্পদ। আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। এছাড়া যে ব্যাংক হিসাবটি ফ্রিজ করা হয়েছে- সেটি আমার স্যালারি (বেতন) অ্যাকাউন্ট। ‘স্যালারি অ্যাকাউন্টে সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা রয়েছে। আপনি কি বেতনের কোনো টাকাই অদ্যাবধি উত্তোলন করেননি? আপনার নিজের ও পারিবারিক খরচ মিটিয়েছেন কীভাবে?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।