শাশুড়ির শতকোটি টাকা আত্মসাৎ আ.লীগ নেতার
অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শাশুড়ির ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য ও নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন শাশুড়ি দেলওয়ারা বেগম।
দেলওয়ারা বেগম স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী প্রয়াত শেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর দেলওয়ারা বেগম সব ব্যবসা ও শিল্পকারখানা পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে তিনি বগুড়ার চারমাথা ও শাকপালা এলাকায় অবস্থিত সরিফ সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেড-১ ও ২ এবং দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সঙ্গে সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির অন্যতম মালিকও তিনি।
আনোয়ার দেলওয়ারা বেগমের বড় মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানার দ্বিতীয় স্বামী। তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক। পাশাপাশি তিনি বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ী সড়কের দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও জেলা বিড়িশিল্প মালিক সমিতির সভাপতি এবং জেলা দোকানমালিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব পদে রয়েছেন।
বগুড়া সদর থানায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আনোয়ারসহ পাঁচজনের নামে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। এতে আনোয়ার হোসেন ছাড়াও মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা (আনোয়ারের স্ত্রী), বাদীর মালিকানাধীন সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম, সরিফ সিএনজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাফিজার রহমান ও দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও অভিযোগটি মামলা হিসেবে থানায় রেকর্ড করা হয়নি।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড না করে তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় যে, বড় মেয়ে আকিলার প্রথম স্বামী ও দৈনিক দুর্জয় বাংলা পত্রিকার প্রয়াত সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মারা গেলে ওই পত্রিকার বিজ্ঞাপন শাখার কর্মী আনোয়ার হোসেন আকিলা সরিফা সুলতানাকে বিয়ে করেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, শেখ সরিফ উদ্দিনের মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন স্ত্রী দেলওয়ারা বেগম। দেলওয়ারা বেগম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তাঁর পাঁচ মেয়ে (আনোয়ারের স্ত্রীসহ) পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
দেলওয়ারা বেগমের অভিযোগ, তাঁর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তাঁর জামাতা আনোয়ার ও আকিলা তাঁর মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতেন। জামাই-মেয়ে দুজনই কাটনারপাড়ায় তাঁর বাসাতেই থাকতেন। ব্যবসার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় জামাতা আনোয়ার নানা ধরনের কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেন। বিভিন্ন সময় লাইসেন্স করা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফাঁকা স্ট্যাম্প, এফডিআর ও ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর নেন আনোয়ার। এসব কথা বাইরে জানালে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকিও দিতেন। এভাবে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার এফডিআর এবং বিভিন্ন ব্যাংকের কয়েকটি হিসাব থেকে আরও ৫০ কোটি টাকাসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর মেয়ে-জামাই দুজনই বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দেওয়ার পর আত্মসাৎ করা টাকার অঙ্ক ১০০ কোটি টাকা প্রকাশ পায়। অন্য আসামিরা আনোয়ার হোসেনকে এ অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, শ্বশুরের সম্পত্তির ভাগ–বাঁটোয়ারা নিয়ে পারিবারিক ঝামেলা চলছে। এ সুযোগে আমাকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে আমার ভায়রাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের বিএনপি দলীয় সাংসদ মোশারফ হোসেনসহ আমার প্রতিপক্ষ আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসাচ্ছেন। তাঁরা আমার শাশুড়িকে জিম্মি করে আমার বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করিয়েছেন।
আনোয়ারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে সাংসদ মোশারফ হোসেন বলেন, এটা একটা পরিবারের মামলা। ওই পরিবারের কাউকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তাঁরা আমার আত্মীয় নন। এখানে রাজনীতি টেনে আনা কোনোক্রমেই সমীচীন নয়।