০৩ অক্টোবর ২০২০, ০৮:২১

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ইবি ছাত্রীকে, দাবি স্বজনদের

উলফাত আরা তিন্নী  © সংগৃহীত

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত উদ্ধার হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী উলফাত আরা তিন্নীকে (২৪) ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার পরিবার ও স্বজনরা। তার নিজ ঘর থেকে মরদেহ উদ্ধারের আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে তিন্নীর মেঝ বোনের সাবেক স্বামী জামিরুল ইসলাম তাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।

তিন্নীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের অভিযোগ, জামিরুলের লোকজন তিন্নীকে নির্যাতনের পর ঘরের মধ্যে মেরে পালিয়ে গেছে। এরপর আত্মহত্যার নাটক সাজাতে মরদেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। তিন্নী ইবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন।

তার মা হালিমা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মেয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া থেকে বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফেরছিল সে। পথে জামিরুল তাকে হুমকি দেয়, ক্ষতি করবে বলেও জানায়।’ এসময় তিন্নীকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিন্নীর চাচা হেলাল উদ্দিন জানান, তিন্নীর বড় বোন মিন্নির ওই গ্রামের ব্যবসায়ী জামিরুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। এক বছর আগে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিল। তবে কিছুদিন পরই জামিরুল স্ত্রীকে আবার ফিরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু মিন্নি রাজি ছিলেন না। এ কারণে জামিরুল তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। এছাড়া বাড়িতে পুরুষ সদস্য না থাকায় তারা অসহায় হয়ে পড়েছিল।

গত বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা নিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, রাত ১০টার দিকে জামিরুল কয়েকজন নিয়ে তিন্নীদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে ফিরে গিয়ে দুই ঘণ্টা পর আবারও ওই বাড়িতে আসেন এবং দোতলায় তিন্নীর ঘরে প্রবেশ করেন। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেনি।

তিনি দাবি করেন, জামিরুলরা তিন্নীকে একা পেয়ে তাকে নির্যাতন করে। তারা তিন্নীকে ধর্ষণ করে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে যায়। তবে তার পা খাটের সঙ্গে লাগানো ছিল। এভাবে ঝুললে কেউ মারা যাবে না। তাকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিন্নীর খালাতো ভাই মখলেসুর রহমান জানান, তারা গিয়ে দেখেন, তিন্নী খাটের ওপর বসা অবস্থায় রয়েছে। ওড়নার এক মাথা ফ্যানের সঙ্গে বাঁধা। আর অপর মাথা তিন্নীর গলার সঙ্গে বাঁধা ছিল। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তার বড় বোন মিন্নি বলেন, জামিরুল ও তার লোকজন তিন্নীর সঙ্গে খারাপ কিছু করেছে। তারা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।

এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার পুলিশ পরিদর্শক মুহসিন আলি সাংবাদিকদেরকে বলেন, হামলার পর আশপাশের লোকজন চিৎকার শুনে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা জানা যাবে।

পুলিশ জানিয়েছে, তিন্নীর বাড়ির দরজায় কোপানোর চিহ্ন, জানালার গ্লাস ভাঙা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। ঘটনার পর জামিরুল পলাতক থাকায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।