সেদিন কী ঘটেছিল বরগুনায়?

বন্ড বাহিনীর হামলার শিকার রিফাত
বন্ড বাহিনীর হামলার শিকার রিফাত  © ফাইল ফটো

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা হচ্ছে আজ বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর)। রায় উপলক্ষে বরগুনার আদালত প্রাঙ্গণে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে আদালতে আসতে শুরু করেছেন আইনজীবী ও তাদের সহকারীরা।

সেদিন কী ঘটেছিল বরগুনায়?

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালের ২৬ জুন। ওই দিন সকালটি আর ১০টি সকালের মতোই শুরু হয়েছিল রিফাত শরীফের। কিন্তু সেই সকালটি হয় তার জীবনের শেষ সকাল। বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে হঠাৎ কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনীর হামলার শিকার হন রিফাত। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।

কিন্তু বর্বরচিত এই হত্যাকাণ্ড সারাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিশোর গ্যাং বন্ড বাহিনী প্রকাশ্যে রিফাতকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকালেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

যেভাবে খুন হন রিফাত

বুধবার, ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজে যান রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। পরে স্ত্রীকে তাকে আনতে কলেজে তিনি। মিন্নিকে সঙ্গে নিয়ে কলেজ থেকে বের হচ্ছিলেন রিফাত। কলেজের গেটে ওঁৎ পেতে থাকা কিছু সন্ত্রাসী রিফাতকে কলেজ গেট থেকে টেনে নিয়ে নয়ন বন্ড ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কাছে নিয়ে যায়। তারা রিফাতের ওপর আক্রমণ করে। হঠাৎ নয়ন বন্ড দৌঁড়ে গিয়ে একটি রামদা নিয়ে আসে। এরপর সেটি দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে রিফাতকে। এসময় মিন্নি অনেক চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেনি হামলাকারীদের। পরে একটি রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়া হয় রিফাতকে। দূর থেকে এই দৃশ্য কে বা কারা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। নয়নের কোপানোর দৃশ্য দেখলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন।

কে এই নয়ন বন্ড?

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের তথ্যমতে, পৌর শহরের বিকেবি রোডের শহরের ধানসিঁড়ি এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকির ছেলে সাব্বির হোসেন নয়ন। তিনি ছিলেন মাদকাসক্ত। শুধু তাই নয়, রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ছিলেন অপরাধ জগতের পরিচিত মুখ। পরে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

এই নয়নের কারণে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। ‘কচু গাছ কাটতে কাটতে ডাকাত’ বনে যাওয়ার মতো ছিঁচকে চুরি আর ছিনতাইয়ের মধ্য দিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীতে পরিণত হয় বরগুনার সাব্বির হোসেন নয়ন।

দলীয় কোনও পদ-পদবি না থাকলেও সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে ছিঁচকে চোর থেকে বরগুনার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত হয় সে। মাদক বিক্রির পাশাপাশি পৌর শহরের বিকেবি রোডের ধানসিঁড়ি এলাকার নিজ বাসায় মাদকসেবীদের মাদক সেবনের সুযোগও করে দিত নয়ন। সুবিধা পাওয়ায় মাদকসেবীরাও ভিড়ত তার কাছে।

এভাবে ধীরে ধীরে বরগুনা শহরের মাদকের ডন বনে যায় সে। নিজের বাসা মাদকের আখড়ায় পরিণত করে নয়ন। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রায় এক বছর আগে তার বাসা থেকে অন্তত ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ইয়াবা এবং দেশি ধারালো অস্ত্রসহ নয়নকে গ্রেফতার করে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু কিছুদিন পরই জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে সে। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য একটি বিশাল বাহিনী গড়ে তোলে সে।

এই বাহিনী মাদক বিক্রিসহ এলাকায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। কোনও রাজনৈতিক পদে না থেকেও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে চলাফেরা করায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে নয়ন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকাশ্য দিবালোকে ডিস ব্যবসায়ী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করে নয়ন ও তার সহযোগীরা।

মামলার আসামীরা

ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক।

রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।


সর্বশেষ সংবাদ