গণধর্ষণের আসামিদের ধরতে পারেনি এসএমপি, ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে নববধূ গণধর্ষণের মামলায় আট আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এরমধ্যে একজনকেও ধরতে পারেনি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। ফলে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ এবং র্যাব এসব আসামিদের গ্রেফতার করেছে।
এছাড়া আগের মামলায়ও আসামিদের ধরতে এসএমপির গড়িমসি প্রমাণ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আসামিদের সঙ্গে শাহপরাণ থানার কর্মকর্তাদের সখ্য থাকারও। এ কারণে এ মামলার তদন্ত প্রভাবমুক্ত থেকে করতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। মামলার বাদী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ওসির সঙ্গে আসামিদের ছবি দেখেছি। এসআই লিপটনের সঙ্গেও তাদের ভালো সম্পর্ক। বুঝতে পারছি না কী হবে?’
এ বিষয়ে সিলেটের আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘টিলাগড় এলাকায় নানা ঘটনায় অনেক মামলা হতে দেখেছি। কিন্তু কেউ বিচার পেয়েছে শুনিনি। ২০১২ সালে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পোড়ানোর ঘটনায় এই বলয়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তবে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সুতরাং সন্দেহ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।’
তিনি বলেন, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা সহজ। গণধর্ষণ মামলার সঠিক তদন্ত না হলে আদালতের কিছু করার থাকবে না। পুলিশের অন্য ইউনিটকে তদন্তভার দেয়া উচিত। তদন্তভার র্যাবের কাছে হন্তান্তর করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
সিলেটের সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশ তদন্ত করলে সুষ্ঠু বিচার হবে কি না সন্দেহ আছে। কারণ টিলাগড়ের মামলাগুলোয় দেখা গেছে, তদন্তে ফাঁকফোকর থাকার কারণে আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসেন। ছাত্রাবাস পোড়ানোর মামলাটি চাঞ্চল্যকর ছিল। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পায়নি বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল সিআইডি। কাউকে দায়ী না করে পিবিআইও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।’
সর্বশেষ গণধর্ষণ ঘটনার দিনের ভিডিও একটি গণমাধ্যমের হাতে এসেছে বলে তারা দাবি করেছে। জাতীয় দৈনিকটি জানিয়েছে, ভিডিওতে রঞ্জিত গ্রুপের ক্যাডার কামরুলের সঙ্গে শাহপরাণ থানার ওসি আবদুল কাইয়ুমকে অনেক সময় ধরে কথা বলতে দেখা গেছে। এছাড়া অন্য অনুষ্ঠানে মিঠু চৌধুরী ও জাহাঙ্গীরের সঙ্গেও বসে থাকতে দেখা যায়। পেছনে গণধর্ষণের প্রধান আসামি সাইফুরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
অপর একটি ছবিতে সাব ইন্সপেক্টর লিপটনের সঙ্গে মাহফুজুর রহমান মাছুম ও রবিউলের সখ্য থাকার প্রমাণ রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, ওই ঘটনার পর জাহাঙ্গীর ও মিঠু চৌধুরী বিষয়টি মীমাংসা করতে পুলিশের সঙ্গে দেন-দরবার করেন। এজন্য ভিকটিমকে হাসপাতালে পাঠাতে দেরি হয়।
তবে এসএমপির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সক্ষমতার বিষয় নয়। আসামিরা সিলেটের বাইরে চলে গেলে তথ্য থাকে না তাদের কাছে। পুলিশের যে ইউনিটের কথাই বলুন, সব বাংলাদেশ পুলিশের অংশ।’
কতটা প্রভাবমুক্ত হয়ে তদন্ত করতে পারবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি চাঞ্চল্যকর’। শাহপরাণ থানার ওসির সঙ্গে আসামিদের সখ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে অনেকেই ছবি তোলেন। তাই বলে কি সখ্য তা প্রমাণ হয়।’