শিক্ষাঙ্গনের দীর্ঘ ছুটিতে অপরাধপ্রবণ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা
নভেল করোনাভেইরাসের প্রাদুর্ভাবে ছয় মাস ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষাঙ্গনের দীর্ঘ এ ছুটি কিশোরদের অপরাধপ্রবণ করে তুলছে বলে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে শহরাঞ্চলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, ধর্ষণ, অস্ত্র ব্যবসা, পাড়া-মহল্লায় নারী ও কিশোরীদের উত্ত্যক্ত করা, খুনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে তারা। কিশোরদের নিয়ে গড়ে ওঠা এসব গ্যাং নিয়ন্ত্রণে ১২ দফা সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে কিশোর গ্যাং বিষয়ে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিংবা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ব্যবহূত হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। তাদের এ কর্মকাণ্ডের নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তাদের মাধ্যমে বড় অপরাধমূলক ঘটনা সংঘটনের আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি এমনই কিছু কিশোর গ্যাংসংশ্লিষ্ট ঘটনায় ঢাকা মহানগরীর কামরাঙ্গীরচর ও নারায়ণগঞ্জে খুনের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।
সাম্প্রতিককালে কিশোরদের মাঝে অনেক বেশি অপরাধপ্রবণতা বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার এ পর্যবেক্ষণ বিষয়ে একমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিশোরদের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ মনে হচ্ছে, পরিবার থেকে তারা যথেষ্ট সময় পাচ্ছে না। পাশাপাশি করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আড্ডা দেয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। সবমিলে কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
ঢাকায় আকস্মিকভাবে মাথাচাড়া দেয়া এ কিশোর গ্যাং হটস্পট হিসেবে রাজধানীর ১০টি এলাকাকে শনাক্ত করেছে গোয়েণ্দা সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে, ডেমরা, সূত্রাপুর, সবুজবাগ, খিলক্ষেত, কোতোয়ালি, উত্তরা পশ্চিম, তুরাগ, খিলগাঁও, দক্ষিণখান ও টঙ্গী। রাজধানীতে বর্তমানে এমন ৩২টি কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৫০০ থেকে ৫৫০ কিশোর। গ্যাংয়ের সদস্যরা ফেসবুক ও ইন্টারনেটে সমাজবিরোধী কার্যকলাপ পরিচালনাসহ মাদকাসক্তি, ছিনতাই, চাঁদাবাজির মতো বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গ্যাংগুলোর একটি আরেকটির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে সংঘর্ষ-খুনোখুনির মতো ঘটনাও ঘটছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪ মাসে কিশোর সন্ত্রাসীদের হাতে ১৩টি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বিরোধের জেরে ১০ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা কদমরসুল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম ওরফে নিহাদ (১৮) ও বিএম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র জিসান আহম্মেদকে খুন করে। এর আগের মাসে কামরাঙ্গীরচরে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে খুন হয় সজিব নামে এক কিশোর। ৮ সেপ্টেম্বর সবুজবাগ এলাকায় ১৪ বছর বয়সী কিশোরের ছুরিকাঘাতে জব্বার আলী নামে আরেক কিশোর খুন হয়। ২৭ আগস্ট উত্তরখানের খ্রিস্টানপাড়া ডাক্তার বাড়ি মোড় এলাকায় কিশোর সোহাগের পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে সমবয়সীরা। ১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আদর্শনগর এলাকায় ৩০ বছর বয়সী শরিফ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও কৃষি প্রশিক্ষণায়তনের সামনে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে হাসান (১৮) নামে এক যুবক খুন হয়। সবশেষ গত শুক্রবার সাতক্ষীরায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের চাপাতির কোপে চার আঙুল হারিয়েছেন এক যুবলীগ নেতা।