ভিপি নুর নয়, ধর্ষণ করেন মামুন: ঢাবি ছাত্রী

নুরুল হক নুর ও হাসান আল মামুন
নুরুল হক নুর ও হাসান আল মামুন  © ফাইল ফটো

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, সহায়তা ও হুমকি প্রদানের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া ওই ছাত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রী।

মামলার বর্ণনায় ওই ছাত্রী হাসান আল মামুনের সঙ্গে প্রেম ও প্রণয়ের কথা জানান। পাশপাশি প্রথম পর্যায়ে নুরুল হক নুরু বিয়ে করিয়ে দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

মামলার অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, হাসান আল মামুন আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সুবাদে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই। নিজ বিভাগের সিনিয়র হওয়ায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের একপর্যয়ে তার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার সঙ্গে তার বিভিন্ন সময়ে ম্যাসেঞ্জার, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। সেখানে আমাকে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে হাসান আল মামুন আমাকে তার রাজধানীর নবাবগঞ্জ, মসজিদ রোড, ১০৪ নম্বর বাসায় যেতে বলে। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে সে।

ঘটনার পর ৪ জানুয়ারি আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ১২ জানুয়ারি আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মামুনের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন ও সোহাগ তা হতে দেয়নি। এর আগে মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে রাজি হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ার পর সে নানা টালবাহান শুরু করে।

অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, উপায়ন্তু না দেখে ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নুরকে মৌখিকভাবে জানাই। সে বলে মামুন আমার পরিষদের, আমার সহযোদ্ধা। তার সঙ্গে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দেব। এরপর ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি তাহলে তার ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে প্রতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেয়। তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১.১ মিলিয়ন সদস্যের গ্রুপে এ প্রচারণার হুমকি দেওয়া হয়। নুর আরও জানায়, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতোমধ্যে মামলার চার নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে লাগিয়ে দেয় কুৎসা রটাতে। তারা ম্যাসেঞ্জার চ্যাট গ্রুপে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করাসহ সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করে।’

অভিযোগে ওই ছাত্রী আরও বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে অ্যাখ্যা দেয়। এরপর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে মামলা করায়; মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।’

এ বিষয়ে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে রেপের (ধর্ষণ) মামলা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’

মামলার অপর চার আসামি হলেন- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান ও মো. সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হিল বাকি। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে হাসান আল মামুনকে, আর অন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে বিচলিত নয় বলে জানিয়েছেন নুরুল হক নুর। নুরের বক্তব্য, আমি এখনও মামলার পুরো বিষয় জানি না। কে এই মামলার বাদী? কারা এর আসামী। এগুলো নিয়ে বিচলিত হতে চাই না। নুরের বক্তব্য, এটা সরকারের ষড়যন্ত্রের অংশ। হয়তো মামলাকারী ছাত্রলীগের নেত্রী। তাকে টাকা দেয়ার বিনিময়ে এই মামলাটি করানো হয়েছে।

এক ফেসবুক লাইভে নুর বলেন, ধর্ষণ সেনসেটিভ বিষয়। গ্রেফতার হতে পারি। আমি বলব, জেল না খাটলে তো নেতা হওয়া যায় না। আমরা যেহেতু মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করছি, জেল তো খাটতেই হবে তিনি। বলেন, গ্রেফতার করলে কী করে, বলা তো যায় না। বিএনপির অনেক নেতাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তবে আল্লাহ না চাইলে কিছুই হবে না। আমরা নীতি-নৈতিকতা ঠিক রেখে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ডাকসু সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তার আরও ৬ জন অনুসারীকে আটক করা হয়েছে। আজ সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিক্ষোভ করার সময় রাজধানীর শাহবাগের মৎস ভবন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে রমনা থানা পুলিশ।


সর্বশেষ সংবাদ