আইএস জঙ্গি সুমনের দাবি তিনি ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৫২ AM , আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০২ PM
প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামি গাজীপুরের বরমীবাজারের মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন। গাজীপুরের বরমীবাজারের সোহেল রানা ওরফে সোহেল ভান্ডারিকে হত্যার কথা পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছেন জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার এই যুবক । পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বলছে, সুমনের দাবি, তিনি আগে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর গোটা পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জঙ্গিগোষ্ঠীর (আইএস) সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটেছে চলতি বছর। মামুন বিদেশে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। জঙ্গিগোষ্ঠীর কাঁধে ভর দিয়ে তুরস্ক পর্যন্ত গিয়ে ইউরোপের কোনো দেশে ঢুকে পড়বেন এমন ইচ্ছে ছিল তার। তবে তাঁর আগেই ধরা পড়ে যান মামুন। খবর প্রথম আলোর।
জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট সাইট ইন্টেলিজেন্স ঢাকার উত্তরে একজন ‘জাদুকরকে’ হত্যার খবর প্রকাশ করে ছবিসহ। তাতে ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি। পরে জানা যায় ওই ব্যক্তির নাম সোহেল রানা (৩৮)। বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমীবাজার এলাকায় তিনি তাবিজ-কবচ বিক্রি করতেন। সিটিটিসি বলছে, পল্টনে বোমা হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার শেখ নাইমুজ্জামান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই হত্যাকাণ্ডের তথ্য দিয়েছিলেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে মামুন আল মোজাহিদ ওরফে সুমন ওরফে আবু আবদুর রহমান, আল আমিন ওরফে আবু জিয়াদ, মোজাহিদুল ইসলাম ওরফে রোকন ওরফে আবু তারিক ও সারোয়ার হোসেন রাহাত নামে চার যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেরায় সোহেল রানা ওরফে সোহেল ভান্ডারিকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন মামুন।
মামুন আল মোজাহিদের বাবা মোসলেম মাস্টারের দাবি, এক সময় তিনি শ্রীপুর আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এখন তাঁর ছেলেরা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মামুন পুলিশকে জানিয়েছেন, চলতি বছর আত্মগোপনে থেকেই শেখ মইনুল নামে যোগাযোগ অ্যাপ টেলিগ্রামে একটি আইডি খুলে অন্য একটি আইডিকে অনুসরণ করতে থাকেন তিনি। ওই আইডির মাধ্যমেই টেলিগ্রামের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর একটি দলের সঙ্গে যুক্ত হন। বায়াত নেওয়ার পর তারা তাঁকে একটি অপারেশন চালাতে বলেন। মামুন কথা মতো তাঁর রোকন ও আল আমিনকে নিয়ে একটি দল গঠন করেন। তাঁদের এ বছরের ১ জিলহজের মধ্যে অপারেশন শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। টার্গেট হিসেবে ঠিক করে দেওয়া হয় পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও অন্য ধর্মাবলম্বী কাউকে। মামুন কথাবার্তা বলার সময় সরকার বিরোধী অনেক কথা বলে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেন। কিন্তু বুঝতে পারছিলেন, অপারেশন না করলে টিকতে পারবেন না। রোকন ও আল আমিনকে টার্গেট ঠিক করতে বললে তাঁরা সোহেল রানাকে বেছে নেন। সোহেল রানাকে এলাকার লোকজন সোহেল ভান্ডারি, সাধু বাবা নামে ডাকত। বরমি বাজারে তাবিজ-কবজ আর টুকটাক কবিরাজি চিকিৎসা করতেন তিনি।
যেভাবে হত্যা করা হয় কবিরাজকে:
ঘটনার দিন সোহেল রানাকে কবিরাজির জন্য মামুন ও তাঁর সহযোগীরা ডেকে আনেন স্থানীয় মাঝিপাড়া গ্রামের ইটভাটায়। এর আগেই বরমীবাজার থেকে চাকু, রশি, রেইনকোট, হাত মোজা, গামবুট, পাথর, ঘুমের ওষুধ কিনেছিলেন তাঁরা। সাধু বাবাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো শরবত খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও তিনি খাননি। পরে তাঁকে গাঁজা খাওয়ানো হয়। ওই সময়ও তাঁরা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। কিন্তু জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা বারবার তাদের জবাই করার জন্য বলতে থাকে। নইলে তাঁদের দল থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে জানায়। ফজরের আজানের পর তারা সাধুবাবার হাত,পা, মুখ বেঁধে ফেলে। মামুন নিজেই জবাই করেন সোহেল রানাকে। রাহাত তাঁকে সাহায্য করেন। ভিডিও করেন আল আমিন। পরে লাশের নাড়ি-ভুড়ি বের করে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে শীতলক্ষার কাপাসিয়া অংশের কাছাকাছি নদীতে ফেলে দেন।
অপারেশন শেষ হওয়ার পর একটি বিকাশ নম্বর থেকে তাঁদের কাছে কেনাকাটা বাবদ ১৩ হাজার টাকা পাঠানো হয়। তাঁদের দুটি আইডি দিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আইডি দুটির একটি যাঁর তিনি বিপদে পড়েছেন বলে পরিকল্পনা স্থগিত করেন। একে একে কয়েকজনই বিপদে পড়েছেন বলে জানান। শেষে আরেকটি আইডি থেকে তাঁদের এলাকা ছাড়তে বলা হয়। ওই রাতেই মামুন গ্রেপ্তার হন।