মৃত্যুর আগেই ফেসবুক প্রোফাইলে ‘ডেড’ লিখলো কে?
কলেজ ছাত্র স্বাক্ষরের মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। হত্যা দাবি করে এর বিচার চেয়ে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা শ্রীমঙ্গল শহর। দেয়ালে লাগানো ‘স্বাক্ষর হত্যার বিচার চাই’ সম্বলিত এমন পোস্টার দেখে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- আলোচিত এই মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা? কী কারণে স্বাক্ষরের এই অকাল মৃত্যু?
স্বাক্ষরের বাবা কল্যাণ দেব বলেন, ‘জানা যাচ্ছে প্রেমিকার সঙ্গে স্বাক্ষরের গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল, এই সম্পর্ক নিয়ে টানাপোড়নও চলছিল। ওই মেয়ে অন্য এক ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার ঘটনার জের ধরে তার ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হতে পারে। মেয়েটিই সব কিছু জানে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব কিছু বের হয়ে আসবে’।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ির পাশে চা বাগান রেখে কেন স্বাক্ষর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে লাখাই ছড়া চা বাগানে আত্মহত্যা করতে যাবে? তাছাড়া, তার ফেসবুক প্রোফাইলের বায়োতে মৃত্যুর আগেই ‘ডেড’ লেখা কে পোস্ট করলো?
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্বাক্ষরের নিখোঁজ হওয়ার দিন ২৯ আগস্ট বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে শহরের কালিঘাট রোডের একটি সিসি ক্যামেরায় তাকে একাই মটরসাইকেল চালিয়ে যেতে দেখা যায়। তার ফোন রেকর্ড অনুযায়ী বিকেল ৫টা ১৯ মিনিটে দিকে তার অবস্থান সনাক্ত হয় শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে লাখাইছড়া চা বাগান। যেখানে তার মৃতহে পাওয়া যায়। সেখানে পৌঁছে সে সিলেটের বাসিন্দা তার এক প্রেমিকার সঙ্গে দুই দফা ফোনে কথা বলে। ফোনালাপে স্বাক্ষর চিত্রার কাছে জানতে চায়- এমোনিয়াম ফসফেট খেলে কি হবে?
এসময় চিত্রা গুগলে সার্চ দিয়ে এ বিষয়ে জেনে উদ্বিগ্ন হয়ে একটি শর্ট ম্যাসেজ করে জানায়, ‘স্বাক্ষর ওটা ইদুঁর মারার বিষ, খাওয়া তো অনেক দূর, বাতাসে মিশেও ক্ষতিকর গ্যাস প্রডাকশন হয়’। এরপর স্বাক্ষর শ্রীমঙ্গল মাস্টারপাড়া এলাকার তার আরেক প্রেমিকার (১৭) সঙ্গে ৫ মিনিট কথা বলে।
পুলিশ জানায়, এ সময় স্বাক্ষর প্রেমিকার সঙ্গে ‘যেখানে যার কাছে গেছ - ভালো থাক, তাকে সুখী করো। এছাড়া, আমার সাথে প্রতারণা করলেও তার সাথে প্রতারণা করো না- তোমাকে চিরমুক্তি দিলাম’ এ জাতীয় কথাবার্তা হয়। এরপর প্রেমিকার ফোন দিলেও স্বাক্ষর রিসিভ করলেও কোন কথা বলতে পারেনি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে চা বাগানের শ্রমিকদের থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে স্বাক্ষরের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ সময় সেখান থেকে ছড়িয়ে ছিটায়ে থাকা এমুনিয়াম ফসফেট, ঘুমের ঔষধের স্ট্রিপ ও তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল পাওয়া যায়। তবে, এ পর্যন্ত প্রাথমিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে এটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণ্ করছেন।
পরিবার জানায়, তাদের স্বপ্ন ছিল ছেলে বৈমানিক হবে। বিমান বাহিনীতে ভর্তি হওয়ার লক্ষ্যে সে ফরম পূরণ করে ঢাকা যাওয়ারও প্রস্তুতি নেয়। গত ৩০ আগষ্ট নিখোঁজের একদিন পর স্বাক্ষরের (১৭) মৃতদেহ পাওয়া যায় লাখাইছড়া চা বাগানের ঝিলের পাশে। ঘটনার পরদিন তার বাবা অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিবারের ধারণা পরিকল্পিতভাবে স্বাক্ষরকে হত্যা করা হতে পারে।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা জানতে তদন্ত চলছে। এছাড়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেয়ে গেলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। আলোচিত মেয়েটিকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তবে তদন্তের স্বার্থে এখনি কিছু বলতে চাই না।