বিভিন্ন শিরোনামে বিশ্বমিডিয়ায় সাহেদ-সাবরিনা কাহিনি
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২০, ০১:৩২ PM , আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০, ০১:৩২ PM
বাংলাদেশে সাহেদ ও সাবরিনার ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট বিক্রির কাহিনি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়। রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজির প্রতারণার ঘটনা প্রবাহগুলোর খবরের সঙ্গে সঙ্গে ধূলিসাৎ হয়েছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। সর্বশেষ ‘বাংলাদেশে জাল করোনা সনদ বিক্রির জমজমাট ব্যবসা’ শিরোনামে বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। এ ছাড়া সাহেদ ও সাবরিনার গ্রেফতার হওয়ার খবর ও তাদের প্রতারণার খবর প্রচার হয়েছে বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের প্রায় প্রতিটিতে।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশে জাল করোনা সনদ বিক্রির জমজমাট ব্যবসা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট দেওয়া রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিম, জেকেজি ও ডা. সাবরিনা-আরিফুল দম্পতির প্রতারণাসহ বাংলাদেশে করোনার বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দেশটির করোনা পরিস্থিতি মূলত অস্পষ্ট। ১৬ কোটির বেশি অধিবাসীর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখের মতো মানুষের। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার হার তুলনামূলক কম।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি হিসাব যা দেখাচ্ছে, দেশটিতে প্রকৃত করোনা আক্রান্ত এর চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিবেদনে রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃক ইতালিসহ বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের জাল করোনা সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দেশটির অভিবাসী শ্রমিকদের কাছে হাজার হাজার জাল করোনা সনদ বিক্রি করা এক হাসপাতাল মালিককে গ্রেফতার করেছে।
গত বুধবার নারীর ছদ্মবেশে সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাহেদ নামের ওই হাসপাতাল মালিককে আটক করা হয় বলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পুলিশ জানায়, বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত সাহেদ বোরকায় নিজেকে ঢেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। দেড় সপ্তাহ ধরে দেশটির তদন্ত কর্মকর্তারা সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তার হাসপাতাল। তিনি পাঁচ হাজার করে টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে আটকে পড়া অভিবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা বর্তমানে এই সার্টিফিকেট পেতে মরিয়া। ফলে সেখানে জাল সার্টিফিকেটের বিশাল এক বাজার তৈরি হয়েছে। এই অভিবাসী শ্রমিকরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুদি দোকান-আড়তে কাজ করা, রেস্তোরাঁর টেবিল পরিষ্কার করা, রাস্তায় পানি বিক্রি করাসহ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত। করোনা পরিস্থিতিতে দেশে গিয়ে আটকে পড়ায় এখন তারা কর্মক্ষেত্রে ফিরতে ব্যাকুল। কাজে যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে কর্তৃপক্ষ করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দাবি করায় সম্প্রতি এ ধরনের জাল সার্টিফিকেট নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে ফেরেন অনেক শ্রমিক।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল ১০ হাজারের বেশি করোনা সার্টিফিকেট দিয়েছে, যার বেশির ভাগই ভুয়া। কেবল সাহেদই নয়, হাজার হাজার জাল করোনা সার্টিফিকেট দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে সম্প্রতি ঢাকার আরও একটি ল্যাবরেটরির দুই চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুক্রবার সাহেদের গ্রেফতার নিয়ে সিএনএনের খবরের শিরোনাম ছিল- বাংলাদেশে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট দিয়ে ৩৫ লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়ে হাসপাতাল মালিকের দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা,
আলজাজিরায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম- বাংলাদেশে ভুয়া করোনা রেজাল্টে হাসপাতাল মালিক গ্রেফতার। অবশ্য এক সপ্তাহ ধরেই এসব করোনা প্রতারণার খবর প্রচার করে আসছে বিশ্বমিডিয়া। সাত দিন আগে আরব নিউজের শিরোনাম ছিল- ‘বাংলাদেশে নকল করোনা সনদ বিক্রির দায়ে এক ডজন স্বাস্থ্যকর্মী অভিযুক্ত’।
এর আগে ইতালির শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘ইল মেসেজেরো’ তাদের প্রথম পাতায় প্রধান শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশ থেকে ভুয়া পরীক্ষা দিয়ে’। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মাত্র ৩৬ ইউরো বা সাড়ে ৩ হাজার টাকা হলেই জ্বর নিয়েও দেশত্যাগ করা যায়। ‘ইল মেসেজেরো’র মতো প্রায় একই শিরোনাম করেছে ইতালির আরেক প্রভাবশালী দৈনিক ‘লা নুয়োভা’।
দৈনিক ‘লেগো’ তাদের খবরের শিরোনাম করেছে ‘সাড়ে ৩ হাজার টাকায় জ্বর নিয়েই বাংলাদেশ ত্যাগ’। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের কারণে ইতালিতে নতুন করে ঝুঁকি তৈরি হওয়ার বিষয়টি প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে দেশটির ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমেও। ইয়াহু নিউজের পার্টনার ‘ইয়াহু ফিনাঞ্জা’ লিখেছে- বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজরা ভুয়া ‘করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট’ বানিয়ে দিচ্ছে, যা দিয়ে সহজেই দেশত্যাগ করা যায়। (সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)