ছেলে-মেয়ের ৫ জন ঢাবি শিক্ষার্থী, বাবা রক্তাক্ত আ.লীগ নেতার হামলায়
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস ছালাম টেডন ও তার ছেলে নাছিমের বাহিনীর বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হয়েছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বড় ছেলে ও সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা হেলালুর রহমান (৬৩), মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও ৮২ বছরের বৃদ্ধা হামিদা খাতুন, ভাতিজা আব্দুল্লাহ আল ফাহিমসহ মোট আট জন।
এদের মধ্যে হেলালুর রহমানের ১০ ছেলে-মেয়ের পাঁচজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রয়েছে বিসিএস তথ্য ক্যাডার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও বিইউপির সহকারী অধ্যাপক। বাকি দু’জন ফিন্যান্স ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী।
ঘটনায় আহত মাওলানা হেলালুর রহমানের ছোট ভাই অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম ফুলাবাড়ীয়া থানায় মামলা করেছেন বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত রোববার (২৪ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে আসামী আব্দুস ছালাম (৫৫) ও তার ছেলে নাছিমের (৩০) নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি গ্রুপ ওই পরিবারের সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় অন্তত ৮ জন আহত হন। এর মধ্যে ভবানীপুর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হেলালুর রহমান মারাত্মকভাবে জখম হন। তার মাথার আঘাত আশংকাজনক হওয়ার তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন স্থানীয় ডাক্তার কামরুজ্জামান।
এদিকে হামলায় আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পথেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। তারা জানান, আবদুস সালামের পুত্র নাসিম তার বাহিনী নিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঠা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন।
মাওলানা হেলালের ভাই ভবানীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ফজলুল হক দুলাল জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার বাড়িতে বৃদ্ধা মা, ভাই ও ভাতিজাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। দুর্নীতিবাজ সালামের মদদে ছেলে নাসিম তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমার বাড়িতে এই হামলা চালায় বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা ‘৭১ এর একজন শহীদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক। আমি নিজেও বন্দুক হাতে দেশের জন্য লড়েছি। আর আজকে স্বাধীন দেশে শহীদ পরিবারের উপর এমন হামলা, কিছু বলার ভাষা নেই।’
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুস ছালামের ছেলে নাছিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘তাদের ওপর হামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা হামলা করিনি; উল্টো আমাদের উপর হামলা হয়েছে। আমার আঙুল ভেঙে গেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলাও করেছি।’
তিনি বলেন, ‘করোনায় ঈদ জামাত নিয়ে তারা সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। আমরা আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হয়ে তা মানতে পারিনি। এ কারণে প্রতিবাদ করেছি। এজন্য তাদের সঙ্গে তর্কও হয়েছে। একপর্যায়ে তারা আমাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে মারধর করে।’
সার্বিক বিষয়ে ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ‘আমি গতকালই থানায় যোগদান করেছি। এরপর অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। সেখানে গিয়ে মারধর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। এরপর ওই ঘটনায় মামলা নিয়েছি।’