করোনা নিয়ে গুজব ছড়ানোয় আটক ৫০
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এপর্যন্ত প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পুলিশ, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে মূল টার্গেট করে দুই সপ্তাহ ধরে এই অভিযান চালাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গুজববিরোধী অভিযানের কথা বলে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচক বা বিরোধীতাকারিদের ধরা হচ্ছে।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সরকার বলেছে, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কেউ কেউ গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভান্ত করার চেষ্টা করছে, এর সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়ার পরই আটক করা হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে যেহেতু এখন লকডাউন চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু মানুষ পরিস্থিতির শুরু থেকেই গুজব ছড়ানোর চেষ্টা চালায় বলে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন।
আর সেজন্য সামাজিক মাধ্যমকেই মুল টার্গেট করে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়েও গুজব ছড়ানোর কিছু চেষ্টার তথ্য প্রমাণ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন কর্মকর্তারা। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পুলিশ, র্যাব এবং তাদের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশের মুখপাত্র ও সহকারি মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলছিলেন, এই অভিযানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হচ্ছে। ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সঠিক তথ্য দেয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ মিথ্যা তথ্য এবং গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখছি,করোনা নিয়ে নানা ধরণের গুজব বা মিথ্যা ছাড়ানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘যারা এভাবে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তে এবং আমাদের স্থিতিশীল পরিস্থিতিটাকে অস্থির করার জন্য পায়তারা করছেন, এ রকম সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই আমরা তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনছি।’ গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান তুলে ধরা হচ্ছে।
তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, দেশ বা বিদেশ যেখান থেকেই গুজব ছড়ানো হোক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে অভিযানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এপর্যন্ত যে ৫০জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং ফৌজদারি কার্যবিধিসহ বিভিন্ন মামলা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই অভিযানের সমালোচনা করেছ বিবৃতি দিয়েছিল। এই সংগঠনের একজন মুখপাত্র মিনাক্ষী গাঙ্গুলী বলছিলেন, গুজব বিরোধী অভিযানের নামে করোনা পরিস্থি নিয়ে সরকারের সমালোচকদেরই বেশি আটক করা হচ্ছে।
‘ভুয়া তথ্য যেনো না ছড়ানো হয়, সেটা সরকার ঠিকই বলেছে। কিন্তু আমরা দেখছি, যারা সরকারের নিন্দা করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ফেক নিউজ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হচ্ছে। তাদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে।’
মিনাক্ষী গাঙ্গুলী তার বক্তব্যে সমর্থনে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন, সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনীম খলিলী যেহেতু সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমারোচনা করেন, সেজন্য বাংলাদেশে থাকা তার পরিবারের সদস্যদের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গিয়ে শাসিয়েছে।
এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সমালোচনা করেন, এমন দু'জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তাদের ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলছিলেন, ‘সারাবিশ্বে সব দেশেই কররোনাভাইরাস নিয়ে এই গুজব ছড়ানোর ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রথমে প্রচার করা হচ্ছে যে, এটা গুজব। এতে কান দেবেন না। যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের প্রথম সতর্ক করা হবে। তারপরও যখন একই কাজ করছে, তখন তাকে ধরা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো একই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে কিছু কিছু লোক এবং এরসাথে নাশকতামূলক ব্যাপারও আছে, তারা এখন পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে সরকার এবং দেশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি করা যায় কিনা,সেই চেষ্টা তারা করছে। যেখানেই এরকম চেষ্টার প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেখানেই কিন্তু ধরা হচ্ছে। এটা সরকারের বিরুদ্ধে বলার জন্য করা হচ্ছে না।’