সাংবাদিক আরিফের নির্যাতনকারী আরডিসি নাজিম উদ্দিনের সেই ভিডিও
কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগে রাত ১২টায় বাড়ির দরজায় আঘাত করা হয়। পরে পুলিশের কথা বলে দরজা খোলার আহ্বান। না খুলতে চাইলে দরজা ভেঙেই প্রবেশ। এরপর সন্ত্রাসী কায়দায় হাত-পা বেঁধে মারধর। চোখ বেঁধে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। আর এত কাণ্ড কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীননের নির্দেশেই করেছেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দীন।
এ ঘটনার পর থেকেই কুড়িগ্রামের আরডিসি নাজিম উদ্দিনের অতীতের ঘটনাগুলো ফের সামনে আসছে। দেখা যায়, ২০১৮ সালের মে মাসে কক্সবাজারের কলাতলী এলাকায় এক বৃদ্ধকে কলার ও কান ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ভিডিওটি আবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তার আচরণ ও নৃশংসতা যে নতুন নয় তা বোঝাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি মনে করিয়ে দিচ্ছেন সাংবাদিক আরিফের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় সংক্ষুব্ধরা। বৃদ্ধ নফু মাঝিকে কান ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান কক্সবাজারের তদানীন্তন ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন। এই বেয়াদবির পরও তার দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়নি।
গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) রাতে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের যোগসাজশে আরডিসি নাজিম উদ্দিন প্রায় ৪০ জন সশস্ত্র ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের বাড়িতে যান। পরিচয় না দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে তাকে বেদম মারধর করে তুলে নিয়ে আসেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভয়াবহভাবে মারধরের পর তার বাসা থেকে আধাবোতল দেশি মদ ও কিছু গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের নামে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওই রাত থেকেই গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবাদ শুরু করলে এবং পরদিন দেশব্যাপী তীব্র প্রতিবাদ হলে জেলা প্রশাসনের এসব কর্মকর্তা কোনও গণমাধ্যমকেই এ ঘটনার আইনগত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। আজ রবিবার (১৫ মার্চ) স্থানীয় এক সাংবাদিক ও আইনজীবী আবেদন করায় সাংবাদিক আরিফকে জামিন দিয়ে দেন আদালত। যদিও আরিফ ও তার পরিবার এ ঘটনায় আদালতে জামিন আবেদনই করেননি। বরং উচ্চ আদালতে আরিফের পক্ষে রিট আবেদন দায়ের করেন বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ। আদালত এই রিট আবেদনের শুনানিতে মন্তব্য করেন, ‘একজন সাংবাদিককে ধরতে মধ্যরাতে তার বাসায় ৪০ জনের বিশাল বাহিনী গেলো, এ তো বিশাল ব্যাপার! তিনি কি দেশের সেরা সন্ত্রাসী?’
গত দুদিন ধরে আলোচিত এই ঘটনায় জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনকে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকের পদ থেকে প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তবে এ ঘটনায় অপর নির্যাতনকারী কুড়িগ্রামের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও আরডিসির দায়িত্ব পালনকারী নাজিম উদ্দিন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার বিচার চেয়েও ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি আরডিসি নাজিম উদ্দিন এর আগে যেসব জেলায় গিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম করে সমালোচিত হয়েছেন সেগুলোও খুঁজে বের করছেন তারা। এরমধ্যেই বগুড়া, বাগেরহাট, মেহেরপুর, কক্সবাজারের বিভিন্ন ঘটনায় তিনি যে সমালোচিত ছিলেন তা বিভিন্নভাবে উঠে আসছে। বিশেষ করে কক্সবাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকাবস্থায় এক বৃদ্ধকে সামান্য ঘটনায় প্রথমে টেনেহিঁচড়ে ও পরে কানে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় চরম সমালোচিত হন নাজিম। সেই ভিডিওটি আবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
জানা গেছে, কক্সবাজারের ওই ঘটনায় নাজিম উদ্দিনকে কক্সবাজার থেকে রাঙ্গামাটি বদলি করা হয়। তবে তিনি তদবির করে মাগুরায় বদলি হন। ওই ঘটনায় নাজিমের বিরুদ্ধে কোনও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, ৭০ বছরের বেশি বয়সী মোহাম্মদ আলী ওরফে নফু মাঝিকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে তৎকালীন এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিন। তাকে জোর করে কক্সবাজার ভূমি অফিসে নিয়ে যান তিনি। এসিল্যান্ডের এই নির্যাতনের শিকার নফু মাঝি ওই ঘটনার পর সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময়টি পবিত্র রমজান মাস ছিল। আমি রোজা রেখেছিলাম। ওইদিন হঠাৎ করেই আমার ভিটাতে কয়েকজন লোক গিয়ে জমি পরিমাপ করা শুরু করে। এ সময় আমি তাদের ‘আপনারা কারা’ জিজ্ঞেস করতেই এসিল্যান্ড নাজিম আমাকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে পাড়াতে থাকেন।’
এ বিষয়ে রবিবার নাজিম উদ্দিনের বক্তব্যের জন্য তার মোবাইলে কয়েকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি একবার রিসিভ করেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর তিনি সংযোগ কেটে দেন।
দেখুন ফেসবুক পেজে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিও: