‘আগে টাকা দাও পরে কাম সারো’— ৩০ লাখে মেয়েকে হত্যার অনুমতি বাবার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২০, ১১:০৫ AM , আপডেট: ১০ মার্চ ২০২০, ১১:১৬ AM
নরসিংদীর বাহেরচরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে হত্যার অনুমতি দিয়েছেন এক পাষন্ড বাবা। কিন্তু যাকে এই অনুমতি দেওয়া হয় তিনি বলেছিলেন আগে টাকা দাও পরে কাম সারো। মেয়েকে খুন করার বিষয়টি মাও জানতেন।
সোমবার এ হত্যাকাণ্ডের পলাতক আসামি মাসুম মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর সিআইডি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ইলমা খুন হয় ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ। পরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বাদী হয়ে ইলমার বাবা আবদুল মোতালেব নিজেই নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন।
জানা যায়, নরসিংদীর বাহেরচরে শাহজাহান ভূঁইয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য বাচ্চুর নেতৃত্বে দুটি দলের প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। শাহজাহান ভূঁইয়ার লোকজন প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে শিশু হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর বিনিময়ে তিনি ইলমার বাবা আবদুল মোতালেবকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন। টাকার লোভে মোতালেব মেয়েকে হত্যার অনুমতি দেন। খুনের আগে মোতালেব বলেছিলেন আগে টাকা দাও পরে কাম সারো। তবে খুন করার জন্য মোতালেব চার লাখ টাকা পেয়েছেন। বাকি টাকা তাকে দেওয়া হয়নি।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপমহাপরিদর্শক (সংঘবদ্ধ অপরাধ বিভাগ) ইমতিয়াজ আহমেদ সিআইডির সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইলমাকে হত্যার পরিকল্পনা হয় ২০১৫ সালের ১ মার্চ। ওই রাতে যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তাতে ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে মোতালেবকে সন্তানের বিনিময়ে ৩০ লাখ টাকার টোপ দেওয়া হয়। তাতেই রাজি হয়ে যান তিনি। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ইলমার দুলাভাই বাবুল বাড়ির পাশে নূরার দোকান থেকে ইলমাকে জিনিসপত্র কিনতে পাঠান। বাড়ি ফেরার পথে দুলাভাই বাবুল ও ফুপাতো ভাই মাসুমের নেতৃত্বে সাত-আটজন তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ইট ও মুগুর দিয়ে মাথা থেঁতলে এবং গলা টিপে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় ইলমার বাবা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। সিআইডি বলছে, এই পরিকল্পনা সম্পর্কে ইলমার মা–ও জানতেন। মাসুম আরও বলেন, ইলমা হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের বাদ দিয়ে মোতালেব বাদী হয়ে বিরোধীপক্ষ ‘বাচ্চু’ গ্রুপের বিলকিস, খোরশেদ, নাসুসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় ওই বছরের ৩১ মার্চ হত্যা মামলা করেন।
এসময় তিনি আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মাসুম মিয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। মাসুম ইলমার ফুপাতো ভাই। পরে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরার নেতৃত্বে একটি দল নরসিংদীর মাধবদী থেকে ইলমার বাবা আবদুল মোতালেব, ফুপাতো ভাই মাসুম মিয়া, গ্রুপ লিডার শাহজাহান ভূঁইয়া, মা মঙ্গলী বেগম ও মো. বাতেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর মাসুম মিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
তদন্তে জানা যায়, নরসিংদী থানার বাহেরচরে শাহজাহান ভূঁইয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য বাচ্চুর নেতৃত্বে দুটি দলের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। শাহজাহান গ্রুপের সদস্য ও ইলমার ফুফাতো ভাই মাসুমের সঙ্গে বাচ্চুপক্ষের সদস্য তোফাজ্জলের মেয়ে তানিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে করার জন্য তানিয়াকে তোলা হয়েছিল মাসুমের ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে। পরে তানিয়ার বাবা দলবল নিয়ে এসে তানিয়াকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। ওই ঘটনায় তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে মাসুম, তাঁর ভাই খসরু ও ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছালে বাচ্চু গ্রুপের সদস্যদের ক্ষতি করতে শাহজাহানের অনুসারীরা ইলমাকে খুনের পরিকল্পনা করে।