নদীতে বেনারসি পরা লাশ মিলল সেই নববধূর
হাতের মেহেদির রঙই শুকোয়নি তার। নববধূ বেশে স্বামীর বাড়ি গিয়েছিলেন। লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ি জড়ানো রয়েছে পরনে। তবে নতুনভাবে জীবনটা শুরুর আগেই পরপারে চলে গেলেন নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০)। নৌকাডুবি কেড়ে নিলো জীবনের সাজানো স্বপ্ন। ফিরলেন লাশ হয়ে।
রাজশাহী মহানগরীর শাহাপুর এলাকার পদ্মা নদীতে ঘটনার চারদিন পর মাথায় আজ সোমবার (৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুইটি খাতুন পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে। রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুর রউফ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সুইটির মরদেহ উদ্ধারের মধ্যদিয়ে তাদের উদ্ধার অভিযান শেষ হচ্ছে। পদ্মা নদীতে গত শুক্রবার নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ নয়জনের মধ্যে কেবল সুইটির মরদেহই পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে তার মরদেহ উদ্ধার হওয়ায় অন্য কেউ অবশিষ্ট রইল না। এতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো নয়জনে। উদ্ধার হয়েছেন আরও ৩২ জন।
এদিকে, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণেই নৌকা ডুবেছে। এই কারণ উল্লেখ করে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করতে যাচ্ছে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম রোববার (৮ মার্চ) এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দুই কার্যদিবসে প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সে হিসেবে রোববার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি কাজ বাকি থাকায় সোমবার (৯ মার্চ) পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে নৌ দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী দুই নৌকার মাঝি বা নৌকার যাত্রীদের কারোও কাছেই লাইফ জ্যাকেট ছিলো না। ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়োতে মাছ ধরার নৌকা, যাত্রীবাহী নৌকা ও প্রমোদতরী আলাদাভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হবে। নৌকার মাঝিরও বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
নৌকাডুবির ঘটনায় নিহত সবাই নববধূ সুইটির পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মার চরে বৌ-ভাত অনুষ্ঠান শেষে বর-নববধূসহ ৪১জন যাত্রী নিয়ে দুইটি নৌকা বাড়িতে ফিরছিল। ফেরার পথে শ্রীরামপুর এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে বর রুমনসহ ৩২ জন জীবিত উদ্ধার হন। পরে নিহত ৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে নিহদের পরিবারকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে জেলা প্রশাসন।