একটি কড়ই গাছের মূল্য ৪ কোটি টাকা!

কড়ই গাছের ছবি
কড়ই গাছের ছবি  © সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল করার প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণের বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক মূল্য ধরার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৭ সালে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১ শতাংশ কাজ শেষ হয়নি। অথচ এরই মধ্যে প্রকল্পের জন্য বরাদ্ধ দেয়া ৬৭৩ কোটর টাকা ব্যয় খরচ হয়ে গেছে।

প্রকল্পের জন্য আরও ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু তাই নয় প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের হিসেবে দেখা গেছে বিস্তর ফারাক। জমি অধিগ্রহণের জন্য জমিতে থাকা এক একটি কড়ই গাছের মূল্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বাড্ডার জোয়ার সাহারা এলাকায় এই প্রকল্পের আওতায় একটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ করা হবে। এই স্কুলের প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু গাছপালা অবকাঠামো ব্যয় দেখানো হয়ে ৬০ কোটি টাকা। এই ৬০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে শুধু মাত্র ১৫টি কড়ই গাছের পেছনে। যেখানে বর্তমান বাজার মূল্যে এক ট্রাক কড়ই গাছের দাম মাত্র এক হাজার টাকা।

বাড্ডার স্কুলের জন্য দেয়া প্রকল্প ব্যয় হিসাব

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে জায়গাটিতে স্কুল হওয়ার কথা সেখানে কোন কিছুই নেই। চারিদিকে দেয়াল বেষ্টিত করে রাখা হয়েছে জায়গাটি। আছে শুধু ১৫টি কড়ই গাছ। এই ১৫টি কড়ই গাছের মূল্য ধরা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। যার প্রতিটির দাম দাঁড়ায় ৪ কোটি টাকা করে।

টিনের চালার এই ঘরের দাম ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা

শুধু তাই নয় ২০১৭ সালে হাতে নেয়া এই প্রকল্পের আওতায় ধামরাই এলাকায় লাকুরিয়াপাড়া মৌজায় কেনা জায়গার মূল্যেও অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে। এখানে চারটি বাঁশের খুঁটি ও একটি ভাঙ্গা টিনের চালা দিয়ে তোলা খুপরি ঘরের দাম দেখানো হয়েছে ৬ কোটি টাকা। এছাড়া ২১ টি সুপারি গাছের মূল্য ধরা হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। এমন অস্বাভাবিক মূল্যের কারণে ক্ষোভ দেখা গেছে সর্বত্র। এরই মধ্যে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে এমন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

এমন ২১টি সুপারি গাছের দাম ধরা হয়েছে ১৩ কোটি টাকা

জনা গেছে, প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম জমির মালিকদের সাথে চুক্তি করে জমি কেনেন। এরপর নিজের ইচ্ছে মতো দাম ধরে তা সরকারের কাছে বিক্রি করেন। আর এভাবেই অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন আমিরুল ইসলাম। ঢাকায় তার অসংখ্য ফ্লাট ও প্লট রয়েছে। এছাড়া মোহাম্মদ পুরে একটি ১৩ তলা বিল্ডিংও রয়েছে।

এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান সরকার জানান, গণপূর্ত বিভাগের কেউ এমন কাজ করতেই পারে না। একটি কড়ই গাছের মূল্য ৪ কোটি আর একটি টিনের চালার ঘরের দাম ৬ কোটি টাকা হওয়া অসম্ভব। বিষয় খতিয়ে দেখা উচিত।

ধামরাইয়ের স্কুলের প্রকল্প ব্যয় হিসাব

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। জমির মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আমার কোনো ভূমিকা নেই। এটা করেছে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। একটি মহল আমাকে বদনাম করার জন্য এমন অভিযোগ এনেছে। এসব কিছুই বানোয়াট। দুদক আপনার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেননি।


সর্বশেষ সংবাদ