নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় মাদ্রাসায় ভাংচুর করলেন যুবলীগ নেতা
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে না পেরে মাদ্রাসায় ভাংচুর ও লুটপাট করেছে যুবলীগ নেতাকর্মীরা। বুধবার (১৬ জানুয়ারি) উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিম কলারন আজাহার আলী দাখিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ১০ বছর ধরে এই মাদ্রাসাটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বালিপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান। গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসাইন মুহাম্মদ আল মুজাহিদের উপস্থিতিতে ব্যবস্থাপনা কমিটির নতুন সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মিজান।
এছাড়া শিক্ষকদের হুমকি দিতে থাকেন। মিজানের হুমকি ধামকির ভয়ে মঙ্গলবার মাদ্রাসাটি বন্ধ রাখা হয়। ফের বুধবার বেলা ১১টার দিকে মাদ্রাসার অফিস কক্ষে এসে মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সালামের কাছে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজগপত্র দেখতে চান মিজান। এ সময় সুপার সব নথিপত্র বিকালে একটি কপি তাকে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্ত এই কথা মানতে নারাজ মিজান। তাই চাপের মুখে পড়ে মিজানকে সব নথিপত্র দেখান সুপার। এ সময় কাগজপত্র দেখতে দেখতে সব গুছিয়ে নিয়ে দৌড়ে বের হয়ে যায় মিজান।
এ সময় সুপার আব্দুস সালাম তার পিছু নিতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয়। একটু পরে মিজান তার লোকজন নিয়ে ফিরে এসে হামলা চালায়। মাদ্রাসা ভবনে সবাইকে অবরুদ্ধ করে শ্রেণি ও অফিস কক্ষে ভাংচুর করেন। এ সময় মিজানের হাতে বড় একটি রামদা ছিল বলে অভিযোগ করেন মাদ্রাসা সুপার আব্দুস সালাম।
এ বিষয়ে উত্তর-পশ্চিম কলারন আজাহার আলী দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. আব্দুস সালাম জানান, বেশকিছু লোকজন নিয়ে মাদ্রাসায় এসে হামলা চালান এই যুবলীগ নেতা। এ সময় মাদ্রাসার বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন মিজান ও তার লোকজন। এমনকি মাদ্রাসার অফিস কক্ষে হামলা চালিয়ে বেশকিছু কাগজপত্র লুটে নেন তিনি। এ সময় শিক্ষকদের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানালে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অভিযুক্ত মিজানুর রহমান জানান, আমার নেতৃত্বে মাদ্রাসায় কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। উল্টো মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির খোকা, সামসু হাওলাদার, বাদল নামের কিছু লোক আমার ছেলে ও মায়ের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করেছে। বর্তমানেও আমি এ মাদ্রাসার সভাপতি। বুধবার সকালে মাদ্রাসায় গিয়ে একজন শিক্ষক অনুপস্থিত দেখে সুপারকে হাজিরা খাতা নিয়ে আসতে বলি। ওই শিক্ষককে অনুপস্থিত দেখাতে বলি হাজিরা খাতায়। এ সময় মাদ্রাসার কয়েকজন লোক এসে আমি কেন মাদ্রাসায় এসেছি তাই জানতে চায়। তারা আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। আমাকে হুমকি দিতে থাকে।
এ খবর জানতে পেরে আমার পরিবারের লোকজন আমাকে উদ্ধারের জন্য মাদ্রাসায় আসলে আমার মা ও আমার ছেলের উপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করা হয়।
ইন্দুরকানী থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান জানান, মাদ্রাসায় হামলার ঘটনা শুনে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। মাদ্রাসায় কয়েকটি চেয়ার ভাংচুরের খবর পেয়েছি। তবে পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। সন্ধ্যায় মাদ্রাসার কর্তৃকপক্ষ একটি লিখিত কাগজ জমা দিয়েছে। এ বিষয় তদন্ত চলছে।