দুকককে জাবি ভিসির দুর্নীতি তদন্তের আহ্বান টিআইবির
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উন্নয়ন কার্যক্রমে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সাথে সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের স্বার্থে অবৈধ লেনদেনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভিসি স্বপ্রণোদিত হয়ে সাময়িক পদত্যাগ করা উচিৎ বলে মনে করছে সংস্থাটি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চলমান দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন প্রকার হয়রানির সংবাদে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।
রবিবার (০৩ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন কার্যক্রমে সরাসরি অবৈধ আর্থিক লেনদেনসহ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় দুই শীর্ষ নেতাকে অপসারণ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।
কারণ অপসারিত নেতাদের প্রযোজ্য আইনি প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি; বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ লেনদেনে জড়িত থাকার যে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এখনো তার কোন তদন্ত হয়নি। দুদকও এই অভিযোগ তদন্তে এখন পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমরা অবিলম্বে দুদককে তার আইনগত অবস্থান থেকে দুর্নীতির এই অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানাই এবং তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানাই।”
নৈতিক অবস্থান ও স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত তদন্ত পরিচালনার স্বার্থে জাবির ভিসি মহোদয়কে সাময়িকভাবে স্বপ্রণোদিত হয়ে দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, “যেকোন অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী বলা যায় না। তাই তদন্তে ভিসি মহোদয়ের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হলে তার পদে পুনর্বহাল জনগণ সাদরে গ্রহণ করবে।
আমরা আগেও বলেছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য এবং এর প্রধান দায়িত্ব ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির শীর্ষ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের। তাই জাবিতে উন্নয়ন কার্যক্রমে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ না করতে পারা অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর।”
ড. জামান বলেন, “গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, সম্প্রতি আন্দোলনকারী এবং প্রশাসনের সমর্থনপুষ্ট আন্দোলনবিরোধীদের পরস্পরের ওপর পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে চলমান পরিস্থিতি সহিংস হয়ে উঠছে, যা শিক্ষাঙ্গনের জন্য কোনভাবেই কাম্য নয়। এ প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা এবং কোন প্রকার বলপ্রয়োগ, অযাচিত হয়রানি ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানায় টিআইবি।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সকল প্রকার নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং উত্থাপিত অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ন্যায় বিচার নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়টির চলমান অচলাবস্থা নিরসনে এবং গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকার ও দায়িত্বপালনরত সরকারী বিভিন্ন সংস্থাসমূহকে কঠোর নিরপেক্ষতা বজায় রাখার মাধ্যমে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।