নারী শ্রমিককে চুরির অপবাদে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন
বগুড়ায় ফুলকপি চুরির অপবাদ দিয়ে শিল্পী খাতুন (৪০) নামে এক নারী নির্মাণ শ্রমিককে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতা নারী রাজমিস্ত্রি মো. রাফিকে (২৬) নিজের স্বামী দাবি করায় তাকে এভাবে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি ।
পুলিশ ওই নারীকে আটক করে জিডি করিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। শুক্রবার সকালে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অনন্তবালা গ্রামের এ ঘটনা ঘটে। পরে রোববার সকালে ওই নারীকে নির্যাতনের ছবি ভাইরাল হয়।
জানা যায়, স্বামী পরিত্যক্ত শিল্পী খাতুন বগুড়া সদরের গোকুল ইউনিয়নের পলাশবাড়ী গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের মেয়ে। তিনি ঠেঙ্গামারা এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিকের কাজ করেন। ঠেঙ্গামারা এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করার সুবাধে শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নের অনন্তবালা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে রাজমিস্ত্রি মো. রাফির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় শিল্পীর। ৮-৯ মাস আগে তারা বিয়ে করেন এবং ঠেঙ্গামারা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে দম্পতি হিসেবে বসবাস করছিলেন।
শিল্পী খাতুন অভিযোগ করেন, স্বামী রাফি ১৫-২০ দিন ধরে তার খোঁজখবর না নেয়ায় তিনি শুক্রবার সকালে শিবগঞ্জের অনন্তবালা গ্রামে ঘর ভাড়ার টাকা নিতে রাফির বাড়িতে যান। তখন রাফি ও তার বাড়ির লোকজন জমি থেকে কপির গাছ উপড়ে তোলেন এবং তাকে চুরির অপবাদ দেন। এর পর তাকে জমিতে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেন। শিল্পীর ভাই মামুন জানান, বোন তাদের সম্মান নষ্ট করলেও এ ব্যাপারে তারা মামলা করবেন।
রায়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি জানান, অনন্তবালা গ্রামে জমির কপি নষ্ট করায় গ্রামের লোকজন শুক্রবার সকালে শিল্পী নামে এক নির্মাণ শ্রমিককে আটক করেন। খবর পেয়ে তিনি গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করে পরিষদে আনেন। ওই নারী তার কাছে অভিযোগ করেন, রাফি তাকে গোপনে বিয়ে করেছেন। খোঁজ না রাখায় তিনি স্বামীর কাছে এসেছিলেন। কিন্তু স্বামী ও তার লোকজন তাকে কপি চোর সাজিয়ে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে নির্যাতন করেন। এর পর তিনি (চেয়ারম্যান) শিবগঞ্জ থানায় খবর দিলে পুলিশ তাকে নিয়ে যায়। চেয়ারম্যান আরও জানান, এর আগেও শিল্পী ওই গ্রামে রাফির স্ত্রীর দাবিতে এসেছিলেন। তখন স্থানীয়রা রাফির পরিবারের কাছে কিছু টাকা আদায় করে তাকে দিয়েছিলেন।
শিবগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, ওই মেয়ে খারাপ চরিত্রের। জমির কপি নষ্ট করায় জনগণ তাকে আটক করেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের ফোন পেয়ে তাকে থানায় আনা হয়েছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালতে নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপও করা হয়েছিল। বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত না হওয়ায় তিনি নিয়মিত মামলার পরামর্শ দেন। কিন্তু শিল্পী খাতুন মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর কবির জানান, কপির ক্ষেত নষ্ট করার অভিযোগে পুলিশ এক নারীকে তার ভ্রাম্যমাণ আদালতে আনার কথা বলেছিল। কিন্তু আদালতের এখতিয়ারে বাহিরে হওয়ায় পুলিশকে নিয়মিত মামলার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।
এদিকে একজন অসহায় নারীকে কপি চুরি ও ক্ষেত নষ্ট করার অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্য বেঁধে রেখে নির্যাতন করায় জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা অভিযুক্ত রাফি ও অন্যদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। রডমিস্ত্রি রাফি বাড়িতে না থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।