নুসরাত হত্যা মামলার রায় শুনে কাঁদলেন বাবা
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা সহ ১৬ আসামিকেই ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। আদালতের এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষসহ নুসরাতের পরিবার। রায় শুনে সন্তোষ প্রকাশ করে কেঁদে ফেলেন নুসরাতের বাবা।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ফেনীতে এই মামলার রায় দেন আদালত। এসময় এসময় নুসরাতের বাবা এ কে এমস মুসা বলেন, ‘আল্লাহর দরবারে অনেক শুকরিয়া। যে রায় দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, মিডিয়া ও সকলের হস্তক্ষেপে। এতে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু আমি আমার পরিবারের পূর্ণ নিরাপত্তা দাবি করছি। আমরা যেন নিরাপদে থাকতে পারি সে আশা করছি।’
এসময় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘আমার বোনের হত্যার রায়ে আমরা খুশী। কিন্তু এখন আমরা যেন নিরাপদে, কোন বিপদে না থাকি- তার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। পরিবার নিয়ে নির্বিঘ্নে থাকতে চাই।’
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ১৬ আসামীর সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে প্রতেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রায়কে ঘিরে ফেনী ও সোনাগাজীর বিভিন্ন স্থানে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরা রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের খণ্ডন শেষে ২৪ অক্টোবর (আজ) রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছিল।
বিচারক মো. মামুনুর রশিদ আজ বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে রায় পড়া শুরু করেন। এসময় ১৬ আসামিকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এর আগে পৌন ১১টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে তাদেরকে ফেনী জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।
অভিযোগপত্রে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিলের নাম উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শান্তি দাবি করেছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম।
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে যৌন হয়রানি করলে রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ৬ এপ্রিল আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যায় রাফি। এ সময় বোরকা পরিহিত কয়েকজন তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তারা। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফি মারা যায়।