২৪ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:২৭

সেই নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা আজ

  © ফাইল ফটো

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করবেন। রায়কে ঘিরে ফেনী ও সোনাগাজীর বিভিন্ন স্থানে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের খণ্ডন শেষে ২৪ অক্টোবর (আজ) রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়। মামলায় অপরাধ প্রমাণ হয়েছে দাবি করে আসামিদের ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ দাবি করেছেন রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, ‘আসামিরা রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তা আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। মামলার রায় বাংলাদেশে উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।’

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু ও কামরুল হাসান দাবি করেছেন, ‘ন্যায়বিচারে আসামিরা খালাস পাবেন। কারণ রাষ্ট্রপক্ষ তাদের মামলার কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি।’ 

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে যৌন হয়রানি করলে রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত ৬ এপ্রিল আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যায় রাফি। এ সময় বোরকা পরিহিত কয়েকজন তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তারা। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফি মারা যায়।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ২১ জনকে থেকে গ্রেফতার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।

অভিযোগপত্রে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিলের নাম উল্লেখ করে সর্বোচ্চ শান্তি দাবি করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনীর পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহ আলম।

চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে।

রায়কে সামনে রেখে রাফির মা শিরিন আক্তার মেয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছেন। বলেছেন, ‘আমার একমাত্র মেয়েকে যেভাবে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, অভিযুক্তদের যেন তেমন ভাবেই কঠিন সাজা দেয়া হয়। সেই ঘটনা সারাক্ষণ মনে ভাসে। আমার একমাত্র মেয়েকে ঘাতকরা যেভাবে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তেমন কঠিন সাজা যেন দেয়া হয় অভিযুক্ত প্রত্যেক আসামিকে।’

রাফির ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘রাফির কক্ষে তার কাপড়-চোপড়, বইখাতা, আসবাবপত্র সবই আছে। শুধু নেই রাফি। ওই কক্ষে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান মা।দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক সাজা পেলে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে সাহস পাবে না।’

কোনো রকম পারিশ্রমিক ছাড়াই এ মামলায় আইনি সহায়তা দিয়েছেন অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ, অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান ও অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজুসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, ‘২৭ মার্চ নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলাটি পরিচালনা করি। নুসরাত মারা যাওয়ার পর ১০ এপ্রিল থেকে এ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই।’

সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইনি লড়াই করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমারও তিনটা মেয়ে আছে, আমার মেয়েরাও লেখাপড়া করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। আর কোনো মেয়েকে যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয় তার জন্য বিনা পারিশ্রমিকে নিরলসভাবে কাজ করছি।’