১০ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:৫৪

চমেকে পিটিয়ে হত্যা: ছাত্রলীগের ১২ নেতাকর্মীর সবাই বেকসুর খালাস

  © ফাইল ফটো

আট বছর ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ছাত্রাবাসে দফায় দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল চমেকের ৫১তম ব্যাচের বিডিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবিদুর রহমান আবিদকে। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ছাত্রলীগের ভিপিসহ ১২ নেতাকর্মীর সবাই দুই মাস আগে আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়ে গেছেন।

আবিদ হত্যা মামলার এজাহার ও চমেক শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আবিদকে ছাত্রদল কর্মী বলে সন্দেহ করতেন চমেক ছাত্রলীগের নেতারা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবিদের জনপ্রিয়তা ছিল। এ কারণে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর দুপুর ২টা, সন্ধ্যা ৭টা ও রাত ১০টায় তিন দফা পিটুনির পর চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে আবিদকে তাঁর বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি বোনের বাসা থেকে চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে আনা হলে সেখানেও বাধা দেন ছাত্রলীগে নেতাকর্মীরা। শেষে ২১ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবিদ।

নিহত আবিদ ছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উত্তর বড়ইতলী গ্রামের মৃত নরুল কবির চৌধুরীর ছেলে। হত্যাকাণ্ডের পর আবিদের মামা নেয়ামত উল্লাহ বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ছাত্রলীগের তৎকালীন ২২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে থানার পুলিশ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

তাঁরা হলেন ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত ছাত্রসংসদের সহসভাপতি (ভিপি) মফিজুর রহমান জুম্মা, চমেক ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহেল পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক বিজয় সরকার, সহসাধারণ সম্পাদক হিমেল চাকমা, ফেরদৌস রাসেল, শান্ত দেবনাথ, মাহাফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, দেবাশীষ চক্রবর্তী, মোস্তফা কামাল, রাশেদুর রহমান সানি ও সালমান মাহমুদ রাফসান। এজাহারভুক্ত বাকি ১০ আসামি অভিযোগপত্র থেকেই অব্যাহতি পেয়ে যান। আসামিরা সবাই ছাত্রলীগ ও ছাত্রসংসদের নেতাকর্মী। তাঁদের মধ্যে সালমান মাহমুদ রাফসান পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের ভিপি ছিলেন।

আবিদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে দুই মাস আগে। গত ১০ জুলাই চট্টগ্রাম পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস মামলার বিচার শেষে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে লেখা হয়, ‘মফিজুর রহমান গংদের অত্র মামলার দায় হইতে খালাস প্রদান করা হইল।’

ওই হত্যা মামলার আসামিদের অনেকেই বর্তমানে ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত। খুনের ঘটনায় ‘নির্দোষ’ হিসেবে তাঁরা বীরদর্পে রাজনীতি করছেন চট্টগ্রামে।

ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট অশোক চৌধুরী কালের কণ্ঠ’র প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এটা ঠিক। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়ায় সাক্ষীরা আসামি শনাক্ত করতে পারেননি এবং সাক্ষ্য-জেরায় আসামিদের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষ প্রমাণে সচেষ্ট ছিলাম।’

তবে মামলার বাদীপক্ষের বক্তব্য ভিন্ন। দুই মাস আগে মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে এবং আসামিরা সবাই খালাস পেয়েছেন এমন তথ্য শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন আবিদের মেজো ভাই মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মামলার বাদী আমার মামা নেয়ামত উল্লাহ। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মামাকে সাক্ষ্য দিতে আদালতে যেতে দেয়নি। ধারাবাহিক হুমকির কারণে তিনি কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আদালতে গিয়ে মামলা পরিচালনার সাহসও হারিয়ে ফেলেছিলেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই আপিল করব।’

খালাস পাওয়া অভিযোগপত্রভুক্ত ১ নম্বর আসামি মফিজুর রহমান জুম্মার সঙ্গে কথা বলতে ফোন করলে কালের কণ্ঠ’র সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অপর প্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ করা ব্যক্তি বলেন, ‘উনি একটু বাইরে গেছেন। পরে ফোন করুন।’ এর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দ্বিতীয় দফা ফোন করা হলেও অপর প্রাপ্ত থেকে সাড়া মেলেনি।

খালাস পাওয়া ২ নম্বর আসামি ও চমেক ছাত্রলীগের তৎকালীন কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক হিমেল চাকমা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মামলার রায়ে খালাস পেয়েছি। তাই আমাকে আসামি বলা যাবে না। যেহেতু মামলার রায় হয়েছে, তাই আমি কথা বলতে চাই না।’