সিক্রেট ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে মারার নির্দেশ
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমে পেটানোর পরিকল্পনা আগেই করা হয়। বিষয়টি জানা গেছে বুয়েট ছাত্রলীগের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে।
আবরারকে পিটিয়ে হত্যার আগেরদিন বুয়েট ছাত্রলীগের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে খুনিদের যে কথোপকথন হয় সেখানে আবরারকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ৪৫মিনিটে সিক্সটিন ব্যাচকে মেনশন করে সেই সিক্রেট গ্রুপে আবরার হত্যা মামলার চার নম্বর আসামি ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন (২২) লেখেন, সেভেন্টিনের আবরার ফাহাদকে মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। ২ দিন টাইম দিলাম।
পরদিন রোববার রাত ৭টা ৫২ মিনিটে সবাইকে হলের নিচে নামার নির্দেশ দেন মনিরুজ্জামান মনির। রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরারকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডোর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান সাদাত, তানিম, বিল্লাহসহ কয়েকজন।
এরপর রাত ১টা ২৬ মিনিটে ইফতি মোশাররফ সকাল ম্যাসেঞ্জারে লেখেন, মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে চ্যাটিংয়ের এসব ম্যাসেজের স্ক্রিন শট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে আবরার হত্যাকাণ্ডের সেই ১৫ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সেদিন রাত ১২টা ২৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে আশিকুল ইসলাম বিটু ২০১১ নম্বর রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। এর প্রায় ৭ মিনিট পর তিনি বেড়িয়ে যান।
কী ঘটেছিল শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমের ভেতরে ঐ রাতে এ প্রশ্ন করা হয় আশিকুল ইসলাম বিটুকে।
প্রত্যক্ষদর্শী বেসরকারি টিভি চ্যানেল টুয়েন্টিফোরকে বিটু বলেন, মনির, জেমি আর তানিমকে ফোন দিয়ে বলে আবরারকে ডেকে আনো ২০১১ নম্বর রুমে। পরে দেখলাম ২ জন ওর দুটো ফোন ও ল্যাপটপ চেক করছে। কোথায় আবরার লাইক দেয় বা কমেন্ট করে অথবা কাদের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে এগুলো নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা। এরপর আমি রুম থেকে বের হয়ে যাই।
পরে ১২.৩০ এর দিকে আমি আবার আমার ল্যাপটপ ও বই নিতে রুমে আসি। আমি রুমের ভেতরে ঢুকে দেখি, আবরার একদম মাটিতে লুটিয়ে পরে আছে। সেখানে আবরার এর ব্যাচেরও ৭-৮ জন ছিল।
তিনি বলেন, এ ঘটনা দেখে আমি নির্বাক হয়ে যাই। পরে রুম থেকে বের হয়ে সকালকে প্রশ্ন করি, এমন হলো কিভাবে?
তখন মুনির উত্তর দেয়, অনিক ভাই মাতাল অবস্থায় একটু বেশি মারছে।
এ কথা শোনার পর আমি তখনই ব্যাগ নিয়ে শেরেবাংলা হল থেকে বের হয়ে আসি।
এ সময় সাংবাদিক বিটুকে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে আবরারকে নির্যাতনের খবর বা তার মৃত্যুর খবর কেন জানাননি কেন কাউকে জানাননি তখন।
এমন প্রশ্নের কোনো সদত্তর দিতে পারেনরি বিটু। তিনি বলেন, আসলে আমি নিজের সুরক্ষার কথাই ভাবছিলাম। তাছাড়া এমন অনেক সময়ই হলে হয়। তবে আমি যখন বের হয়ে চলে আসি আবরারের দেহে তখনও প্রাণ ছিল। তখনও তাকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে হয়তো বাঁচানো যেত।
এদিকে আজ (১০ অক্টোবর) ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন অমিত সাহা। ঘটনার রাতে ২০১১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা উপস্থিত ছিলেন বলে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে প্রমাণও মিলেছে। ফেসবুকে ফাঁস হওয়া একটি স্ত্রিনশটে দেখা গেঠে অমিত লিখেছেন, আবরার ফাহাদ কি হলে আছে?
তবে একান্ত সাক্ষাতকারে নিজেনে নির্দোষ দাবি করেছেন অমিত সাহা। তিনি বলেন, আমি ২০১১ রুমে থাকি বলেই আমার নাম সবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।