ক্যাসিনো ক্যাশিয়ার মাকসুদও কোটিপতি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৫৭ AM , আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৫৭ AM
ঢাকা মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মাকসুদুর রহমান। ক্যাসিনো কারবার, জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করে তিনি এখন কোটিপতি। তাঁর অপকর্মের সব তথ্য গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। বিশেষ করে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রিমান্ডে মাকসুদ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
মাকসুদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, তিনি যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ছবি কৃত্রিমভাবে নিজের পোস্টারে ‘সুপার ইম্পোজের’ মাধ্যমে যুক্ত করে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। সেই পোস্টার ভোলা থেকে ঢাকার অলিগলির সীমানাপ্রাচীর থেকে সদরঘাটের লঞ্চের গায়েও স্থান পেয়েছিল। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছিল। আর এ কারণে শাস্তিস্বরূপ সংগঠন থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে এর পরও তিনি দমে থাকেননি। নিজেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয় দিয়ে সমানে অপকর্ম করে বেড়াতেন। আর তাঁর এই অপকর্মের হোতা ছিলেন যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের এক প্রভাবশালী নেতা।
খালেদের তথ্যের ভিত্তিতে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, যুবলীগের অন্যান্য নেতার মতো মাকসুদও ক্যাসিনো কারবারের অন্যতম সদস্য। এর বাইরে তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অপরাধ কর্মের তথ্য দিয়েছেন খালেদ। ক্যাসিনো কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া খালেদ ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে মাকসুদসহ ২৫ জনের নাম বলেছেন, যাদের সবাই ক্যাসিনোকাণ্ডের পাশাপাশি চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত। এদের মধ্যে মাকসুদ সম্পর্কে খালেদ বলেছেন, তিনি যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের এক প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে সব অপকর্ম করতেন। বলা চলে, ওই নেতার সব অপকর্মের একজন বড় সাক্ষী মাকসুদ। গত কয়েক বছরে মতিঝিলের ক্লাবপাড়া থেকে মাকসুদের হাত দিয়ে লাখ লাখ টাকা ওই নেতার হাতে যেত। প্রতি রাতে কমপক্ষে এক লাখ টাকা তিনি পৌঁছে দিতেন নেতার হাতে। আবার কোনো কোনো রাতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পৌঁছে দিতেন। এভাবে গত কয়েক বছরে শুধু মাকসুদের হাত দিয়েই ক্যাসিনো কারবারের কয়েক কোটি টাকা পেয়েছেন ওই প্রভাবশালী নেতা। মাকসুদ মূলত তাঁর অঘোষিত ‘ক্যাশিয়ার’ ছিলেন বলে রিমান্ডে জানিয়েছেন খালেদ।
খালেদের রিমান্ডে দেওয়া তথ্য ধরে মতিঝিল এলাকায় যুবলীগের মাঠপর্যায়ের অনেক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মতিঝিল এলাকার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, মাকসুদ ওই প্রভাবশালী নেতার চাঁদাবাজির প্রধান সৈনিক ছিলেন। তিনি মূলত নেতার হয়ে চাঁদাবাজি করতেন। এ ছাড়া মতিঝিলকেন্দ্রিক মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটে নেতার প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। বিদেশে মানবপাচারকারী চক্রের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করে নেতাকে দিতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ওয়ার্ড কমিটিতেও তিনি কমিশন বাণিজ্য করতেন। ঈদের সময় যাত্রাবাড়ীসহ মতিঝিল এলাকার সব পশুর হাটে নেতার প্রতিনিধি হিসেবে চাঁদাবাজিসহ সব কর্মকাণ্ড তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। বিভিন্ন ইনস্টিটিউটে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণেও তাঁর হাত ছিল। দক্ষিণের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক রাজিব হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে রমনা এলাকার টেনিস ক্লাবের সামনে এবং ইস্কাটন এলাকায় দুজন ঠিকাদারকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। সেই ঘটনায়ও তাঁর নাম এসেছিল। এ ছাড়া দুর্নীতির টাকায় মতিঝিল ও পুরান ঢাকা এলাকায় তাঁর তিনটি ফ্ল্যাট থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, মাকসুদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় প্রথমে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের বড় কোনো পদে ছিলেন না। লেখাপড়া শেষ করে তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
অভিযোগ অস্বীকার করে মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমি কোনো ক্যাসিনো কারবারে জড়িত নই, ক্যাসিনোর টাকা কখনো আমার হাতে আসেনি, জুয়া মাদক কারবারে আমি কখনো জড়িত ছিলাম না।’ তবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছবি ‘সুপার ইম্পোজ’ করে নিজের পোস্টারে যুক্ত করে প্রচারণা চালানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘সেটা আমার ভুল ছিল। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আর কখনো এ ধরনের কাজ করিনি।’