সম্রাটকে নিয়ে লুকোচুরি, জনমনে সন্দেহ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২৯ AM , আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:২৯ AM
ক্যাসিনো গডফাদার ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা সে বিষয়েও কেউ মুখ খুলছেন না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সংক্রান্ত প্রশ্নের কৌশলী উত্তর দিচ্ছেন। রোববার ওবায়দুল কাদের অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন ‘প্লিজ, ওয়েট অ্যান্ড সি’। শনিবার আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, অপেক্ষা করুন, যা ঘটবে দেখবেন। এদিকে তার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কিছু বলছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে সম্রাটকে আদৌ গ্রেফতার করা হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সেই পুরনো সন্দেহ ফের উঁকি দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরুর পর মাদক, অস্ত্র এবং মানি লন্ডারিং আইনে ১৭টি মামলা হয়েছে। প্রায় প্রতি ঘটনার সঙ্গে সম্রাটের সংশ্লিষ্টতা আছে। তবে কোনো মামলাতেই তাকে আসামি করা হয়নি। এছাড়া সম্রাটের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ব্যবসা, বিদেশে অর্থ পাচারসহ আটটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পাওয়া গেছে। তাকে গ্রেফতার করা হলে এসব অভিযোগই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হবে। সবকিছু প্রস্তুত কিন্তু তার গ্রেফতার বা আটকের বিষয়ে নেই কেবল সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা ।
তবে কেউ কেউ বলছেন, শীর্ষ পর্যায়ের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইঙ্গিতটি নাকচ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, এসব ক্ষেত্রে নতুন করে সবুজ সংকেতের প্রয়োজন নেই। সব সংকেত নিয়েই তারা মাঠে নেমেছেন। সম্রাট তাদের নজরেই আছেন। তিনি গোয়েন্দাজালে আটকা পড়েছেন। এখন এই জাল কেটে বের হওয়ার সুযোগ অনেক কম।
তবে তিনি গ্রেফতার এড়াতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার এড়াতে পারবেন না এ বিষয়ে তারা প্রায় নিশ্চিত। কারণ তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো গুরুতর। সময় হলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং জি কে শামীম র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর সম্রাটের অপকর্মের নানা তথ্য দিয়েছেন। খালেদ বলেছেন, পুরো ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে ছিল। পাশাপাশি ক্যাসিনোর টাকা তিনি বিদেশে পাচার করতেন।
যুবলীগের নাম করে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, ফুটপাতে চাঁদাবাজি এবং গরুর হাটের নিয়ন্ত্রণও ছিল তার হাতে। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে তার সহযোগীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ে। টাকার বিনিময়ে পদ বেচাকেনার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অপরদিকে জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতেন।
জিসানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরুর পর সম্রাটের মাধ্যমে ঠিকাদারির কাজ নিতেন তিনি। টেন্ডারপ্রতি কমিশন দিয়েছেন। তার মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করেছেন। কাজ পেতে সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রতিপক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অভিযোগগুলো তদন্তের পর সত্যতাও মিলেছে।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা সাজানোর প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করে রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার হিসাব স্থগিত করেছে। এরপর থেকে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তার হিসাব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। প্রাথমিকভাবে তার বিভিন্ন হিসাবে বিপুল অঙ্কের অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি কিভাবে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে গোয়েন্দা ইউনিট। ক্যাসিনোতে বেশকিছু কয়েন পাওয়া গেছে, যেগুলো আন্তর্জাতিক মানের। এসব কয়েনের মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট।
গ্রেফতার এড়াতে চেষ্টা অব্যাহত : একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্রাট গ্রেফতার এড়াতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। তিনি সব সময় নিজেকে একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। এজন্য অকাতরে অর্থ বিলিয়েছেন চারদিকে। তবে নিজের পদ পাওয়ার জন্য তেমন কিছুই করেননি বলে দাবি তার ঘনিষ্ঠদের। তারা বলেন, অর্থের বিনিময়ে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়, নিজের যোগ্যতার কারণেই তিনি যুবলীগে এত বড় পদ পেয়েছেন।
তাদের মতে, এতদিন আওয়ামী লীগসহ যুবলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনে নিজের গুরুত্ব প্রমাণ করেছেন সম্রাট। এ কারণেই এখনও তাকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। তারা বলেন, সম্রাট বিশ্বাস করে তার কারণেই দলের বিভিন্ন কর্মসূচি সফল হয়েছে। এর প্রতিদান তিনি পাবেন। এক ধরনের অহংবোধ থেকেই অভিযান শুরুর পরও নেতাকর্মীদের নিয়ে কাকরাইলে ভূঁইয়া ম্যানশনে যুবলীগের কার্যালয়ে অবস্থান করেছেন। তার ধারণা ছিল, যদি কোনো কারণে তাকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে আসে তবে নেতাকর্মীরা প্রতিহত করবে। এর মাধ্যমে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন।
কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে নেতাকর্মীরাও দু’দিনের মধ্যে কাকরাইলের কার্যালয় থেকে সটকে পড়েন। এতে ঘাবড়ে যান সম্রাট। বিশ্বাস অহংবোধ সব মাটিতে মিশে যায়। ভয় পেয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে কাকরাইলের কার্যালয় থেকে আত্মগোপনে চলে যান। আত্মগোপনে থেকেই গ্রেফতার এড়ানোর জন্য তদবির করছেন বলে জানা গেছে ।