মুখোমুখি শামীম-খালেদ-ফিরোজ
টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনো বাণিজ্যের অভিযোগে গ্রেফতার জি কে শামীম, ল্যাংড়া খালেদ ও কালা ফিরোজকে র্যাবের জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার তাদেরকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ র্যাবের কাছে হস্তান্তর করে। র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাদেরকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাজধানীর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক তথ্যই তাদের জানা রয়েছে। তাদের সঙ্গে যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের যোগাযোগ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে এই জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে। জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত তথ্য মিললে, সম্রাটকে আটক করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্রাট তাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে আটক করা হবে।
এদিকে গুলশানের অস্ত্র-মাদক মামলায় ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ওরফে ল্যাংড়া খালেদের আরও ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলায় পাঁচদিন ও মাদক আইনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ দিদার হোসাইন এ আদেশ দেন। এছাড়া মাদক আইনে করা মামলায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
খালেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা:রিমান্ডে থাকা ল্যাংড়া খালেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়ায় গতকাল বিকালে সাড়ে ৪টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিত্সক তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করেন। ইসিজি ও এক্স-রে করানো হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. নূরে আলম বলেন, খালেদের যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোর রিপোর্ট ভালো। তাকে চিকিত্সা দেওয়ার জন্য ভর্তির কোনো প্রয়োজন নেই।
শামীমকে র্যাবে হস্তান্তর : অস্ত্র ও মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জি কে শামীমকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করে। র্যাবের একটি সূত্র জানায়, জি কে শামীম ও ল্যাংড়া খালেদকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জি কে শামীমের টেন্ডারবাজির প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে ল্যাংড়া খালেদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ল্যাংড়া খালেদ ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া কোম্পানি’র নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টেন্ডার জমা দেওয়ার পর ওই টেন্ডার নেগোশিয়েট করেন জি কে শামীমের জি কে বিল্ডার্সের সঙ্গে। র্যাব ল্যাংড়া খালেদের টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনোর চাঁদাবাজির অর্থের সন্ধানের চেষ্টা করবে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা রাজনৈতিক ও টেন্ডারবাজির ‘হাইপ্রোফাইল’ ব্যক্তির নামের তালিকা ক্রসচেক করা হবে। জানা গেছে, গণপূর্ত, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, রেল অধিদপ্তর, শিক্ষা ভবন, ক্রীড়া পরিষদ, এলজিআরডিসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর গড়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে টেন্ডারবাজি করে জি কে বিল্ডার্স ও ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া কোম্পানি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদকারী এক কর্মকর্তা জানান, শান্তিনগরে হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাল্টিস্টোরেড ভবন নির্মাণ করেছে খালেদের ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া কোম্পানি। বিনা টেন্ডারে জোর করে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার এই নির্মাণ কাজ বাগিয়ে নেন খালেদ। জানা গেছে, ওই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এসএম বাহালুল মাজনুন চুন্নুকে এক ধরনের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কাজ নেন তিনি। চুন্নু ১৯৭৭-৮১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এদিকে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ আলমকে অস্ত্র মামলায় ৫ দিন ও মাদক আইনে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। গতকাল তাকেও র্যাবে হস্তান্তর করা হয়।
মাদক মামলায় রিমান্ডে লোকমান: মাদক আইনে করা মামলায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান ভূঁইয়ার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে লোকমানের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপিপন্থী আইনজীবী মকবুল হোসেন ফকির।
মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, মাদক মামলায় রিমান্ড পাওয়া লোকমান হোসেন ভুঁইয়াকে থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে।