লুডু খেলতে বাধা, শিক্ষকের নির্যাতনে চোখ হারানোর শঙ্কা শিশুর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:২৫ PM , আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৩৭ PM
মোজাম্মেলের হোসেনের অপরাধ ছিল, লুডু খেলার জন্য বাধা হয়ে দাড়ান শিক্ষক হাফেজ নাঈমের। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে নাঈমের বেত্রাঘাতে দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক কোমলমতি মাদ্রাসাছাত্রের। রাজধানীর খামারবাড়ি রোডের ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাত বছর বয়সী ওই ত্রের দুই চোখ আঘাতে নষ্ট হওয়ার উপক্রম। মাদ্রাসাছাত্র মোজাম্মেল হোসেনের বাড়ি হবিগঞ্জে। সে সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের হাতির থান হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র।
মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থী জানায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর মোজাম্মেলকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বেত্রাঘাত করেন হাফেজ নাঈম। মোজাম্মেলের বাবা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে হাফেজ নাঈম আহমেদ ও তার বাবা এবং মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম আলফুকে আসামি করে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মাদ্রাসার অন্য ছাত্রের সঙ্গে দাওয়াত খেতে গেলে সেখান থেকে ২০ টাকা উপহার পায় শিশু মোজাম্মেল। শিক্ষক হাফেজ নাঈম, মোজাম্মেলের কাছ থেকে সেই ২০ টাকা নিয়ে লুডু কিনতে চান নাঈম। মোজাম্মেল টাকা না দিতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে নাঈম তার চোখে গামছা বেঁধে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এই অমানসিক নির্যাতনের পর মোজাম্মেলের চোখে রক্তক্ষরণ হয় ও ফুলে যায়।
মোজাম্মেলের মা রেহানা খাতুন অভিযোগ করেন, প্রথমে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে আমার ছেলে যেভাবে খুশি বেত্রাঘাত করে। পরে অন্য ছাত্রকে দিয়ে মোজাম্মেলের হাত-পা ধরিয়ে রেখে প্রায় আধাঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালায় । নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের জানালে মোজাম্মেলকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন শিক্ষক নাঈম।
এদিকে মোজাম্মেলের চিকিৎসা খরচ জোগাড় করতে ও থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন তার বাবা বিল্লাল মিয়া। ইতিমধ্যে ছেলের চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পেশায় গরুর পাইকার বিল্লাল মিয়া বলেন, ছেলের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে এতদিনে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার নিয়ে ঋণী হয়ে গেছি। ছেলের চোখ দুটো সুস্থ করে তুলতে কমপক্ষে এক মাস ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। আমি এখনই নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।
নির্যাতনকারী শিক্ষকের বাবা তাজুল ইসলাম আলফু জানান, ‘আমি একটি ব্যাংকে চাকরি করি। ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। বিষয়টি আমিও মেনে নিতে পারছি না।’
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, নির্যাতনকারী শিক্ষক ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপালকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন মোজাম্মেলের বাবা। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।