৩০ আগস্ট ২০১৯, ১৯:৩৯

অনেক এতিমকে হাফেজ বানিয়েছেন সেই নারী কর্মকর্তা

  © ফাইল ফটো

কয়েকদিন আগে রাজধানীতে অফিসে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হয় এক নারী ব্যাংকার। প্রাইম ব্যাংকের উত্তরা জসীমউদদীন রোড শাখা কার্যালয়ের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায় গওহর জাহান নামের ওই কর্মকর্তার মৃত্যুর দৃশ্য। বিয়ে না করায় মৃত্যুর আগে নানা ধরণের সমাজসেবামূলক কাজেও জড়িত ছিলেন তিনি।

গওহর জাহানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় ভিডিওটি। ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল তার। এমন শারীরিক অবস্থা নিয়েও ব্যাংকে নিয়মিত কাজ করছিলেন তিনি। নিজের ভাইয়ের বাড়িতে থাকতেন। আদর করতেন ভাইয়ের ছেলে-মেয়েদের।

গওহর জাহানের ভাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মারুফ নাওয়াজ এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, অনেকদিন আগে ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল গওহরের। পাত্রপক্ষ পিছিয়ে যাবে ভেবে কখনো বিয়ে করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেয় বোন। আমার সন্তানদের পরম যত্নে আগলে রাখতেন, দুই ছেলেকে আব্বাজান বলে ডাকতেন। তাদের ছবিও কর্মস্থলে ঝুলিয়ে রাখতেন।

পড়ুন: ব্যাংকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন নারী কর্মকর্তা

মারুফ নাওয়াজ বলেন, গওহরের সহায়তায় কয়েকজন এতিম ছাত্র কোরআনে হাফেজ হয়েছেন। ভারতে গিয়ে পেন হার্ট সার্জারি করেছিলেন গওহর। সেই চিকিৎসক তাকে মা বলে সম্বোধন করতো। মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগেও ভারতের সেই চিকিৎসক গহরকে ফের চেকআপের জন্য ভারত যেতে বলেন। সময় না পেলে যে কোনো ভালো জায়গায় হার্ট চেকআপ করতে বারবার অনুরোধ করেন তিনি।

এছাড়াও ছোট ভাই দুবাই থেকে টাকা পাঠিয়ে চেকআপ করতে যেতে অনেক অনুরোধ করে। ভারত যেতে ভিসার জন্য তার পাসপোর্ট জমাও দিই। কিন্তু এখন তো আর সেসবের দরকার নেই।

তিনি বলেন, দিনে রাতে যে কারো কোনো বিপদে ছুটে যেতেন তিনি। বিয়ে করেননি বলে নিজেকে মাদার তেরেসার সঙ্গে মেলাতেন। মাদার তেরেসা যেভাবে নিজের জীবন মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেছেন সেভাবে তিনিও নিজের জীবনকে উৎসর্গ করবেন বলে জানান।

মারুফ নাওয়াজ বলেন, বোন হলেও আমাদের মায়ের মতো ছিলেন গওহর। বোন হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। আমার ছোট দুই ভাইকে পড়ালেখা থেকে শুরু করে বিদেশে পাঠানো সবকিছুই করেছেন বোন। আমার বিয়েতেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

গওহরের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী শহরের মহিষবাথান এলাকায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে ২০০১ সালে চাকরিতে যোগ দেন। তার বাবা মৃত মাওলানা নাওয়াজ ছিলেন পুলিশের কর্মকর্তা। বৃদ্ধা মা নুরজাহান বেগম মেয়ে হারিয়ে শোক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। গত সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কর্মস্থলেই মারা যান গওহর।