বন্ডদের উত্থান: মাদকের আখড়া স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরেই
চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পর দেশব্যাপী আলোচিত হচ্ছে বরগুনার কিশোর গ্যাং ও মাদকের আখড়া। বের হয়ে আসে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়া ফেসবুক ভিত্তিক নয়নবন্ডের গড়া ০০৭ গ্রুপ ও নেপথ্যে মাদকের ভয়াল সাম্রাজ্য।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, উপকূলীয় শান্ত জনপদে কোথা থেকে, কিভাবে কেন এই গ্যাং গ্রুপ ও মাদকের আগ্রাসন। স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরেই মাদকের আখড়া বসে। আর সেখান থেকেই নয়নবন্ডের গড়া গ্রুপ ০০৭ এর জন্ম হয়।
রিফাত শরীফ হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় নয়নবন্ডের প্রতিষ্ঠিত ০০৭ গ্রুপ। নিহত রিফাত শরীফ ও ঘাতক নয়ন বন্ডসহ কিলিং মিশনের মাস্টারমাইন্ড রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী ও হত্যায় অংশ নেয়া অনেকেই এই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছে।
এ মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ জনের ১০ জন ও পলাতক ৪ জনের দুইজন বরগুনা জিলা স্কুল থেকে সদ্য পাশ করা ছাত্র। রিফাত হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার আরিয়ান শ্রাবণ এবছর এ স্কুল থেকেই এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এছাড়াও গ্রেপ্তার রাতুল সিকদারও নবম শ্রেণির ছাত্র। বরগুনার সবচেয়ে পুরোনো বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত জিলা স্কুলের ছাত্রদের কেন এই নৈতিক অবক্ষয়? বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গিয়ে মেলে ভয়াবহ তথ্য।
বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত প্রধান শিক্ষকের বাসভবন। বেশ কয়েকবছর ধরে এই ভবনটি পরিত্যক্ত। ভেতরে প্রবেশ করে প্রমাণ মেলে মাদকের নিরাপদ অভয়াশ্রম এই ভবনটি। ইয়াবা সেবনের উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এখানে। ঠিক একই অবস্থা বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের ভেতরেও। ছাত্রাবাসটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হয়নি, তবে হোস্টেল সুপার বা ছাত্ররা কেউ এখানে থাকে না। ফলে এই ভবনেরও বেশ কয়েকটি কক্ষে নির্বিঘ্নে চলে মাদক সেবন।
হোস্টেলের পেছনের দিকে দীঘিরপাড়ের সরু একটি গলিপথ ধরে সামনের দিকে হাঁটতেই দেখা মেলে গোপন একটি দরজার। মাদক সেবনের পর এখান থেকে বের হবার গুপ্ত পথ এটি। উত্তর প্রান্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যক্ত ভবন। ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলে নজরে আসে সদ্য সেবন করা ইয়াবার উপাদান ও সরঞ্জামাদি।
মাদকাসক্ত নামপরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বরগুনা জিলা স্কুল থেকে সদ্য পাশ করা দুই ছাত্র জানান, বড় ভাইয়েরা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে মাদক নিয়ে আর ছাত্রদের অনেকেই স্কুল চলাকালীন ও ছুটির পরে বিদ্যালয় কম্পাউন্ডের এসব স্পটে মাদক সেবন করে।
বিদ্যালয়ের সামনের দীর্ঘবছরের ঝালমুড়ি বিক্রেতার তথ্য মতে, বিদ্যালয়ের ছাত্রদের একাংশ মূলত বড় ভাইদের হাত ধরে গ্যাং গ্রুপে যুক্ত হয়ে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। প্রায়ই তুচ্ছ বিষয়াদি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও মারপিট হয়। কিন্তু বড় ভাইদের হস্তুক্ষেপে আবার মিটেও যায়।
একাধিক অভিভাবকের সাঙ্গে কথা যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, মাদকের আখড়া বসে স্কুল কম্পাউন্ডের ভেতরেই। তবুও নিরুপায় হয়েই সন্তানদের পাঠাতে হয় বিদ্যালয়ে।
তবে বিদ্যালয় কম্পাউন্ডে এমনকি প্রধান শিক্ষকের বাসভবন ও হোস্টেলে মাদকসেবিদের এমন আড্ডার ব্যাপারে কোনো তথ্যই নেই প্রধান শিক্ষকের কাছে। এমনকি কিশোর গ্যাং নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হলেও প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিয়ে মোটেও অবগত নন।