জন্মদিনের কেক কিনে বাবা বাড়ি গিয়ে দেখলেন ছেলে নেই
নিজের জন্মদিনকে ঘিরে শিশু মুহিন ইসলামের আগ্রহের যেন শেষ ছিল না। কয়েকদিন ধরেই সে বারবার জন্মদিন পালনের কথা বলছিল বাবা-মাকে। শনিবার ছিল মুহিনের অষ্টম জন্মবার্ষিকী। সন্তানের জন্মদিন পালনের জন্য বাবা-মায়েরও ছিল সাধ্যানুযায়ী প্রস্তুতি।
সে অনুযায়ী সকাল থেকেই শুরু হয় আয়োজন। বিকেল আত্মীয়স্বজন আসে। মাংস, পোলাও, পিঠা ও পায়েসের আয়োজন করা হয়। মুহিনের জন্য নতুন জামা কিনে আনেন বাবা। মা ব্যস্ত রান্নাবান্না ও আত্মীয়স্বজন সামলাতে।
সন্ধ্যায় বাজার থেকে ইংরেজিতে ‘হ্যাপি বার্থডে মুহিন’ লেখা একটা কেক নিয়ে আসেন বাবা। কিন্তু যখন কেক কাটার প্রস্তুতি চলছিল তখন মুহিন কোথাও নেই। বাবা-মা এ-বাড়ি ও-বাড়ি খুঁজে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরাও মুহিনকে খুঁজতে বের হন।
চারদিকে গুজব ছড়ায় ‘ছেলেধরা’ মুহিনকে নিয়ে গেছে। এরইমধ্যে প্রতিবেশীদের কেউ একজন বলেন, সন্ধ্যায় তিনি মুহিনকে বাড়ির পাশে থাকা গভীর গর্তের দিকে যেতে দেখেছেন। এ কথা শুনে সবাই ছুটলেন সেই গর্তের দিকে। গলাপানির ওই গর্তে নেমে খুঁজে পাওয়া যায় মুহিনকে। সেখান থেকে উদ্ধার করে মুহিনকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী ইউনিয়নের প্রামাণিকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। মুহিন জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। বাবা ময়নুল ইসলাম কৃষক। মা মণি বেগম গৃহিণী। দুই ছেলের মধ্যে মুহিন বড় ছিল।
প্রতিবেশী বিপ্লব সরকার বলেন, ছেলেকে হারিয়ে ময়নুল নির্বাক হয়ে গেছেন। প্রতিবেশীরা জানান, মুহিনদের বাড়ি থেকে ১০০ গজের মধ্যে বাচ্চু মিয়ার আবাদি জমি। এই জমির দুই শতকের মাটি খুঁড়ে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ায় সেখানে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ধারণা, গর্তের কাছ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পা ফসকে মুহিন পড়ে ডুবে যায়।
জগদীশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিপদ রায় বলেন, ‘দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুহিনের রোল নম্বর ছিল ৪। গতকাল সে স্কুলের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। মুহিনের অকালে চলে যাওয়ার ঘটনাটি আমরা শিক্ষকেরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’