কয়েকটি প্রশ্ন: মিন্নিকে নিয়ে যাওয়া ও অসহায় বাবার কান্না (ভিডিও)
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০১৯, ০৪:০৮ PM , আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯, ০৮:১৭ PM
বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড মামলার প্রধান সাক্ষী ও স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। যদিও আদালতে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। বলেছেন, স্বামী রিফাত হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তথ্যমতে, রিমান্ড শুনানির সময় মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। স্থানীয় এমপির পুত্র অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথের হুমকির কারণে কেউ তাঁর পক্ষে দাঁড়াতে সাহস পায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের অনেকেই মিন্নিকে দায়ী করছেন। যদিও 'কিন্তু' নামক সংশয় তাদের মধ্যে থেকেই গেছে। মারুফ নামে একজনের ভাষ্য, রিফাতকে যখন চারদিক থেকে এলোপাতাড়ি কোপানো হচ্ছিল, তখন জীবন ঝুকি নিয়ে চারদিকের কোপ ঠেকাচ্ছিলেন মিন্নি। ভিডিওটি দেখলে একবারও মনে হবে না, ‘‘স্বামীর গায়ে লাগা কোপ ঠেকাতে মিন্নির গাফিলতি ছিল। কারণ, যে কোন মুহুর্তে তারও বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারত। তারপরও যদি মিন্নিকে দায়ী করার চেষ্টা করা হয়, তবে তা হাস্যকর। আসলে সবকিছুই হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের ইশরায়। যেটা আমাদের মত সাধারণের অজানা।’’
রিফাত হত্যার ভিডিও
মিন্নির বাবাও বলছেন, ‘আমার মেয়ে নির্দোষ। রিফাতকে বাঁচাতে সে জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল। যেটা দেশবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন। তারপরও আমার মেয়েকে ফাঁসানো হয়েছে। কারণ আসামিরা প্রভাবশালীদের আত্মীয়-স্বজন। তাদের সঙ্গে প্রভাবশালীদের যোগসূত্রও রয়েছে। মূলত আসামিদের বাঁচানোর জন্য আমার মেয়েকে ফাঁসানো হয়েছে।’
এদিকে, মিন্নিকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের পর রিফাত হত্যার বিচার সঠিক পথে আদৌ এগোবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। সমাজের বিভিন্ন মহলের মানুষের এ সংশয় নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে সংসদীয় কমিটি। মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে গ্রেপ্তারের পেছনে প্রভাবশালী কারো প্ররোচনা রয়েছে কি না, গতকাল বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠকে সেই প্রশ্ন তোলেন একজন সংসদ সদস্য। এ নিয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এছাড়া মিন্নিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালীরা যাতে আড়ালে চলে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপাশি আয়েশাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ সংবেদনশীল আচরণ করার এবং তাঁকে যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে আসক। আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
মূলত মিন্নিকে আসামি দেখিয়ে গ্রেপ্তারের ঘটনায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের বিষয়টি জোরালো হয়ে ওঠে। রিফাত হত্যার পর পরই সোশাল মিডিয়ায় সুনাম দেবনাথের ভাষ্য এবং মিন্নির পাশে আইনজীবীদের না দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে পোস্ট ইত্যাদি জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।
মিন্নির এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনাও করেছেন কেউ কেউ। কয়েকটি প্রশ্ন করে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন শওগাত আলী সাগর। তিনি লিখেছেন, ‘আমি হস্তক্ষেপ না করলে তো মেয়েটাকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া হতো’- ফেনীর নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারার পর খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মন্তব্য করেছিলেন। নুসরাতকে চরিত্রহীন বানানোর চেষ্টা আসলে শুরুই হয়েছিল। ঘটনার পরবর্তী অধ্যায়গুলোর দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকান, ফেনী আর বরগুনা, নুসরাত আর মিন্নির ঘটনার মধ্যে কি অসাধারণ মিল আছে। ফেনীতে ছিল ওসি মোয়াজ্জেম, বরগুনায় ওসি আবির। ফেনীতেও মিছিল মানববন্ধন হয়েছে, বরগুনায়ও। ফেনীতেও এমপি, চেয়ারম্যানের নাম এসেছে, বরগুনায়ও এমপি চেয়ারম্যানের নাম আছে।
ফেনীতে নুসরাতের মৃত্যু ঘটার পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। বরগুনায় মিন্নি মরেনি, প্রধানমন্ত্রী এখনো হস্তক্ষেপ করেননি। ফলে মিন্নিকে চরিত্রহীন বানানোর, তাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গডফাদারদের বাঁচিয়ে দেয়ার চেষ্টায় এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমি জানি, আপনারা মিন্নি আর নয়নের তথাকথিত ‘সেক্স ভিডিও’র কথা বলবেন।
ভিডিওটা যারা দেখেছেন- তারা দয়া করে নিজের যৌন সম্পর্কের সাথে মিলিয়ে দেখেন তো? কি? স্বাভাবিক মনে হয়? আচ্ছা, এই ভিডিওটা কারা ছড়ালো? কোথায় পাওয়া গেছে এই ভিডিও? নয়নের সেলফোনে ছিল? পুলিশের তথাকথিত ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর সেটি পুলিশের হাতে পড়েছে? তাহলে তো সেটি তদন্তের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার কথা? পুলিশের সেটি আদালতে উপস্থাপন করার কথা? সেটি বাইরে ভাইরাল হলো কিভাবে? পুলিশ কি সেটি ছড়িয়ে দিয়েছে? না কি এটি গ্রেফতার হওয়া নয়নের সহযোগিদের কাছে ছিলো? তাহলে তো একই প্রশ্ন ওঠে? এই ভিডিওটা কারা ছড়ালো? আমি তো মনে করি, তাদেরই বরং আইনের আওতায় আনা দরকার।
দেখুন, প্রধানমন্ত্রীর কথাই কিভাবে অক্ষরে অক্ষরে ফলে যায়। তিনি ‘হস্তক্ষেপ না করলে’ কিভাবে একটি নারীকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া হয়!
মিন্নি দোষী কী না, রিফাত হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা আছে কী না- সেটা তদন্তের এবং আইনি প্রক্রিয়ায় বিচারের বিষয়। কিন্তু তাকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়া, যেমন নুসরাতকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিলো- এই অভিন্ন চক্র কিভাবে তৈরি হলো?