নুসরাতের পরীক্ষা আটকে দিতে চেয়েছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজ

  © ফাইল ফটো

ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করায় ক্ষোভ থেকে গত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে বেত্রাঘাত করেছিলেন মা শিরিন আখতার। তখন পাল্টা ক্ষোভ প্রকাশ করে নুসরাত কীভাবে পরীক্ষা দেয় তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেন সিরাজ। নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় ১৭ নম্বর সাক্ষী সোনাগাজী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইয়াছিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

সোমবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে ইয়াছিন বলেন, ওইদিন সকালে আমি বাড়িতে ছিলাম। নুসরাতের মায়ের অনুরোধে মাদ্রাসায় যাই। সেখানে গেলে অধ্যক্ষের হাতে নুসরাতের যৌন হয়রানির বিষয়টি জানতে পারি। ঘটনাটি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন নুসরাতের মা শিরিন।

তিনি বলেন, তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি অধ্যক্ষের গায়ে বেত দিয়ে আঘাত করেন। তখন পাল্টা ক্ষোভ প্রকাশ করে সিরাজ বলেন, নুসরাত কীভাবে পরীক্ষা দেয় আমি দেখে নেব।

ইয়াছিন ছাড়াও মামলার ১৬ নম্বর সাক্ষী সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন ও ১৮ নম্বর সাক্ষী অ্যাম্বুলেন্স চালক নুরুল করিমের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আসামি পক্ষের আইনজীবীরাও তাদের জেরা করেন। এতথ্য জানিয়েছেন জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ।

সাক্ষ্য দিতে গিয়ে মাওলানা মোহাম্মদ হোসেইন জানান, অধ্যক্ষ সিরাজ সহকর্মীদের সঙ্গে সবসময় দুর্ব্যবহার করতেন এবং দাপট দেখাতেন। অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম ও কুকর্মের প্রতিবাদ করায় প্রভাষক মো. হারুনকে লাঞ্ছিত করেন। তার প্রতিবাদ করলে সিরাজ মোহাম্মদ হোসেইনকে ‘শো-কজ’ করেন।

সোমবার সকাল ১১টা থেকে মাঝে ৪৫ মিনিট বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম চলে। এদিন সাক্ষীদের জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান, আহসান কবির বেঙ্গল ও নুরুল ইসলাম। রাষ্ট্র ও বাদী পক্ষে ছিলেন পিপি হাফেজ আহাম্মদ, এপিপি এ কে এস ফরিদ আহাম্মদ হাজারী ও এম শাহজাহান সাজু।

আজ মঙ্গলবার মামলার ১৯ নম্বর সাক্ষী, ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মো. নুরুল আবছার ফারুকী, ২০ নম্বর সাক্ষী নুসরাতের সহপাঠী তানজিনা বেগম সাথী ও ২১ নম্বর সাক্ষী সহপাঠী বিবি জাহেদা তামান্নার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত।

গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এঘটনায় গুরুতর আহত নুসরাত ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে এবং আট জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে নুসরাতে ভাই নোমান মামলা দায়ের করেন।


সর্বশেষ সংবাদ