০৭ জুলাই ২০১৯, ১২:৫৩

৬ মাসে ধর্ষণের শিকার ৪০০ শিশু

  © বিবিসি

দেশে ধর্ষণের পর ভয়াবহ নৃশংসতার সাথে হত্যার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এসব ঘটনা যখন শিশুদের নিজ আবাসের আশেপাশে, নিজ চত্বরে ঘটে, শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বাড়তি উদ্বেগও। দেশে শিশু ধর্ষণ এবং এরপর হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

গত শুক্রবার রাজধানী ঢাকার ওয়ারী এলাকায় একটি বহুতল ভবনে শুক্রবার নিজ বাসার ওপরের তলার ফ্ল্যাটে খেলতে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছে সাত বছরের একটি মেয়ে। ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। শিশু নির্যাতন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছেন সাংবাদিক ও গবেষক আফসান চৌধুরী।

তিনি বলছেন, ‘আমাদের দেশে কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে নির্যাতিত শিশুকে হত্যাও করা হচ্ছে। দুটো কিন্তু আলাদা বিষয়। ১৯৯৮ সালের দিকে গবেষণার সময়ও যৌন নির্যাতন ব্যাপক হারে দেখেছিলাম। এখনো তাই হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগের তুলনায় হিংসাত্মক ঘটনা বেশি হচ্ছে, যদিও আগের তুলনায় এখন ঘটনাগুলো বেশি জানা যাচ্ছে। এখন অনেক বাবা -মা পুলিশের কাছে যাচ্ছে। সামাজিক প্রতিরোধ হচ্ছে। এর ফলে নির্যাতক অনেক সময় নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে শিশুটিকেই হত্যা করছে।’

বেসরকারি সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ বলছে, ২০১৮ সালে ৩৫৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ২২ জন এবং আহত হয়েছে ৩৩৪ জন।

শুধু যে মেয়ে শিশুরাই এমন নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে, তা নয়। শিশু অধিকার ফোরাম’র হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ১৪টি ছেলে শিশু ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যদিও শিশু অধিকার সংগঠনগুলো মনে করে বাস্তবে এর সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ছেলেরা এতো নির্যাতিত হয় তা ভাবাই যায় না। ছেলেরা যে ছেলেদের দ্বারাই নির্যাতিত হয় তা নয়, নারীদের দ্বারাও সেটি হয়। কিন্তু স্কুল গুলোতে বলা হচ্ছে না বলেই শিশুরা এ সম্পর্কে জানছে না যে - তাকে কী করতে হবে।’

শিশুকে কিভাবে সাবধান হবে, কিভাবে বুঝবে বিপদ আসছে? জবাবে আফসান চৌধুরী বলেন, ‘বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনকে প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। এজন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম আমরা বস্তিতে বস্তিতে, সরকারও কিছু ভূমিকা রেখেছিলো।’

তিনি বলেন, ‘এমন কোন নিরাপত্তা শিশুদের নেই। একটা হিংসাত্মক সমাজ যেখানে যে কেউ যেকোন সময় মারা যেতে পারে। সেখানে শিশুর নিরাপত্তার বিষয়টি নেই বললেই চলে। এই যে ধরুন বাল্য বিবাহ। এটা এক ধরণের নির্যাতন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারও এসব বিষয়ে চাপ অনুভব করছে না।’

তিনি বলেন, কোথায় যেতে হয়, কে আদর করলো, কে শরীর স্পর্শ করলো এবং এর কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ - তা সম্পর্কে শিশুকে কোন কিছু শেখানো হয় না। অনেকে আত্মীয় স্বজন ও পারিবারিক সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে কিছু বলে না। কিন্তু শিশুদের আদরের নামেও অনেক ক্ষেত্রে যৌনতার প্রকাশ ঘটে। তবে সব ক্ষেত্রেই তা নয়। খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার অস্বস্তি হয় এমন কিছু করা উচিত না।’

তিনি আরও বলেন, এখন প্রতিবাদ বেশি হচ্ছে যেমন এবং তেমনি ঘটনাগুলোও বাড়ছে। খবর: বিবিসি বাংলা।