ক্রসফায়ারে নয়ন বন্ড নিহত হওয়ার ব্যাপারে যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম- সবাইকে ধরে ফেলব। কিন্তু ধরার শেষ মুহূর্তে নয়ন শুধু পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। আমি যতটুকু শুনেছি, সে অবস্থান চেঞ্জ করছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে কেন গুলিবিনিময় করতে হয়েছিল সেটি না জেনে কিছু বলতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘তবে আমি যতটুক জানি, নিশ্চয়ই সে (নয়ন) অস্ত্র দেখিয়েছিল, গুলি বা নিজেকে আড়াল করার জন্য সে প্রচেষ্টা করেছিল। সে জন্য পুলিশ নিজের নিরাপত্তায় জীবন বাঁচানোর জন্য হয়তো এটি করেছে। এ বিষয়ে আমাকে আরও জানতে হবে।’ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘তিনজন নৃশংসভাবে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল, তাদের আমরা খুঁজছিলাম। আমাদের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী, আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী তার (নয়ন) পিছু নিয়ে সর্বক্ষণ প্রচেষ্টা করছিল তাকে ধরার জন্য।’
এসময় নয়নকে জীবিত ধরা হলে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জীবিত অবস্থায় সবাইকে ধরা হয়েছে। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন- কারা এর পেছনে ছিল, হয়তো আপনারা আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন। আমরা ইনকোয়ারি করার পর সবই আপনারা জানতে পারবেন।’
তিনি বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যে বর্বরতা ছেলেরা চালিয়েছে, এ ধরনের ঘটনা যেন বাংলাদেশে আর না হয়- আমরা সেটিই চাই। রিফাত হত্যায় প্রভাবশালী অনেকেই জড়িত, তাদের শেল্টার দেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সবাইকে ধরেছি। প্রভাবশালী যারা থাকবে, আমরা নিশ্চয়ই তাকেও বের করব। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন কোনো প্রভাবশালী- এমনকি আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকেও আমরা কিন্তু ক্ষমা করছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার সবই করছেন। এর জন্য কোনো প্রভাবশালী, কোনো জনপ্রতিনিধি বা কোনো নেতা আমাদের কাছে অন্তরায় নয়। যে অন্যায় করবে সে আইনের মুখোমুখি হবে।’
আজ মঙ্গলবার ভোরে দিনে-দুপুরে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় অন্যতম প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। নয়নের প্রাণহানির বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন।
এসপি জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনটি চাপাতি, একটি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। নয়ন বন্ডের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোর রাত ৪টার দিকে বরগুনা সদর থানার পুলিশ নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তারের জন্য ওই গ্রামে যায়। ওই গ্রামের খলিল মাস্টারের বাড়ির সামনে গেলে নয়ন বন্ড ও তাঁর সহযোগীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে।
এতে ঘটনাস্থলে নয়ন নিহত হন। হামলায় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়াসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন। এঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া, নাজমুল হাসান, সাগর ও সাইমুন নামে অপর তিনজন বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। এদিকে মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় গ্রেফতার হলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি।
গত ২৬ জুল (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে সন্ত্রাসীরা স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রিফাত শরীফকে। পরে বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-সমালোচনার ঝড় ওঠে।