নয়নের মৃত্যুতে যা বললেন রিফাতের স্ত্রী
দিনে-দুপুরে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় অন্যতম প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। আজ ভোরে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নয়নের প্রাণহানির বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন।
এদিকে নয়ন নিহত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। যদিও ইস্যুটি নিয়ে দু’দিন ধরেই গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে আজ বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে চির কৃতজ্ঞ। তাদের কারণেই নয়ন আজ শাস্তি পেল। আয়েশা বলেন, শুধু নয়ন মরলে হবে না, প্রত্যেককে শাস্তি দিতে হবে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত এবং পরিকল্পনাকারী- সবার শাস্তি চান তিনি।
এর আগে তিনি বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চেয়েছিলাম। আমি নয়ন, রিফাত ফরাজী, রেশান ফরাজী আরও ওই জায়গায় যারা ছিল প্রত্যেকের ফাঁসি চাই।
আরো পড়ুন: যেভাবে ধরা পড়েন অজপাড়া গাঁয়ে লুকিয়ে থাকা নয়ন
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভোর রাত ৪টার দিকে বরগুনা সদর থানার পুলিশ নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তারের জন্য ওই গ্রামে যায়। ওই গ্রামের খলিল মাস্টারের বাড়ির সামনে গেলে নয়ন বন্ড ও তাঁর সহযোগীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলে নয়ন নিহত হন। হামলায় বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান মিয়াসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন। এঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পূর্ব বুড়িরচর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল বারেক ও কবির হোসেনের তথ্যমতে, ভোর রাত সোয়া ৪টার দিকে তাঁরা বেশ কিছু গুলির শব্দ শুনতে পান। এতে তাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। ভোর ৫টার দিকে তাঁরা খলিল মাস্টারের বাড়ির দরজার সামনে বাঁধের ঢালে এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশ তাঁর লাশ ঘিরে রেখেছিল।
গত ২৬ জুল (বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে সন্ত্রাসীরা স্ত্রীর সামনেই কুপিয়ে গুরুতর জখম করে রিফাত শরীফকে। পরে বিকেলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-সমালোচনার ঝড় ওঠে।
পড়ুন:গুলির শব্দে ঘুম ভাঙে, জেগে দেখি ঘরের দরজায় লাশ
কে এই নয়ন?
আলোচিত হত্যার পেছনে পরোক্ষভাবে রাজনৈতিক পেশি শক্তির সন্ধান মিলেছে। জানা গেছে, নিহত শরীফের খুনীদের মধ্যে মূল ভূমিকা পালনকারী নয়ন বন্ড রাজনৈতিক নেতাদের শেল্টারে ক্ষমতা বাড়িয়েছেন। জড়িয়েছেন মাদক ব্যবসা, অস্ত্রবাজি ও খুনসহ নানা অপকর্মে।
খোঁজে জানা গেছে, বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত নয়ন বন্ড। এছাড়া বরগুনা পৌরসভার কাউন্সিলর রইসুল ইসলাম রিপনের ছেলে জনির ডান হাত হিসেবেও পরিচিত নয়ন। পাশাপাশি মাদক ব্যবসার বিপুল অর্থ তো আছেই। অন্যদিকে রিফাত ফারাজীর আপন খালু বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া রিফাতের চাচাতো দাদা মরহুম লতিফ ফারাজী ২০ বছর আগে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
সূত্রের তথ্য, ২০১৭ সালের ৫ মার্চ রাতে নয়নের বাসায় অভিযান চালায় বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় বিপুল পরিমাণ মাদক, দুইটি দেশীয় অস্ত্র ও এক সহযোগীসহ নয়নকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বাসা থেকে উদ্ধার করা মাদকের মধ্যে ছিল ৩০০ পিস ইয়াবা, ১২ বোতল ফেনসিডিল ও ১০০ গ্রাম হেরোইন। বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, নয়ন বন্ডের মাদক বাণিজ্যের কথা আমরা জানি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে নয়ন ও তার সহযোগীরা গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে; কিন্তু বারবারই তারা জামিনে বেরিয়ে যায়।
বরগুনা সরকারি কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিমে বরগুনা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে নয়ন বন্ডের (২৫) বাসা। নয়নের বাবা মৃত ছিদ্দিকুর রহমান। দুই ভাইয়ের মধ্যে নয়ন ছোট। নয়নের বড় ভাই মিরাজ দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে শ্রমিকের কাজ করেন। মাকে নিয়েই ওই বাসায় বসবাস করছিল নয়ন।