২৭ জুন ২০১৯, ০৯:০৫

স্ত্রীকে উত্যক্তের প্রতিবাদ থেকেই নৃশংস হত্যাকাণ্ড

  © সংগৃহীত

বরগুনায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীর ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত রিফাত শরীফের সঙ্গে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। মূলত তার স্ত্রী আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করা নিয়ে এ দ্বন্দের সূত্রপাত হয়। হত্যাকারী নয়ন বিয়ের পর থেকে আয়েশাকে নানাভাবে উত্যক্ত করায় রিফাতের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। নিহত রিফাত শরীফ সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের দুলাল শরীফের ছেলে। অভিযুক্তদের মধ্যে নয়ন ও রিফাত ফরাজী নামের দুজনকে চিনতে পেরেছেন বন্ধুরা।

বুধবার রিফাত শরীফকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপানোর সময় তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তার তা ঠেকানোর চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন রিফাত শরীফ (২২)। বরগুনার কলেজ সড়কের ক্যলিক্স কিন্ডার গার্টেনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এর ভিডিওচিত্র ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

রিফাতের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা বরগুনা সরকারি কলেজের ছাত্রী। তাকে বিয়ে করা নিয়ে নয়নের সঙ্গে রিফাত শরীফের দ্বন্দ্ব চলছিল। এজন্য প্রতিদিন আয়েশাকে কলেজে পৌঁছে দিতেন রিফাত। স্ত্রীকে কলেজে দিয়ে ফেরার পথে হামলার শিকার হন রিফাত শরীফ।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ জানান, দুই মাস আগে তাঁর ছেলে বরগুনা পুলিশ লাইনস এলাকার আয়েশা আক্তার মিন্নিকে বিয়ে করে। এর পর থেকে আয়েশাকে নিজের সাবেক স্ত্রী দাবি করে পশ্চিম কলেজ সড়কের নয়ন নামের এক তরুণ তাকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করে। একপর্যায়ে নয়ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি পোস্ট করতে থাকে। এ নিয়ে রিফাত শরীফের সঙ্গে নয়নের বিরোধ হয়। এর জের ধরে নয়ন ও তার বন্ধু রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী ও রাব্বি আকন ফরাজীসহ কয়েকজন মিলে রিফাতকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রিফাতের বুকে, ঘাড়ে ও পিঠে গুরুতর আঘাত থাকায় প্রচুর রক্ষক্ষরণ হচ্ছিল। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে বরিশাল পাঠানো হয়। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে হাসপাতালে আনার পর দ্রুত তাঁকে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

বরগুনার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মাদ হোসেন বলেন, অভিযুক্তদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। নয়নকে গ্রেপ্তারে থানা-পুলিশ ও ডিবি সমন্বিত অভিযান চালাচ্ছে। নয়নের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক মামলা আছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি। বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

রিফাত শরীফ বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকাকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরো দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরিফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা দৃর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তাঁরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।