মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায় এই নির্যাতন (ভিডিও)
শেরপুরের নকলায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ডলি খানম নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে বর্বর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী বলছে, মধ্যযুগীয় কায়দায় ডলি খানমকে নির্যাতন করা হয়েছে। এতে অন্তঃসত্ত্বা ডলির গর্ভে থাকা সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।
সোমবার (১০ জুন) রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় সূত্রে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র প্রকাশ হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ডলি খানম পৌর শহরের কায়দা এলাকার দরিদ্র কৃষক শফিউল্লাহর স্ত্রী। এছাড়া স্থানীয় চন্দ্রকোনা কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, নকলা পৌর শহরের উপকণ্ঠ কায়দা গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে মো. শফিউল্লাহর সঙ্গে এক খণ্ড জায়গা নিয়ে তার সহোদর বড়ভাই আবু সালেহ, নেছার উদ্দিন ও সলিম উল্লাহর বিরোধ ও মামলা চলে আসছিল। এর জের ধরে ১০ মে সকালে স্থানীয় গোরস্থান সংলগ্ন শফিউল্লাহর দখলীয় জমির ইরি-বোরো ধান আবু সালেহ ও তার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে কাটতে গেলে শফিউল্লাহ বাধা দেন।
এতে তিনি প্রতিপক্ষের ধাওয়ার মুখে পিছু হটে নকলা থানায় ছুটে যান। ততক্ষণে আবু সালেহর নেতৃত্বে একদল লোক ধান কাটতে শুরু করে। পরে শফিউল্লাহর ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ডলি খানম ডাক-চিৎকার দিয়ে বাঁধা দিতে গেলে আবু সালেহর হুকুমে তার ছোটভাই সলিমউল্লাহ, ভাইবউ লাখী আক্তারসহ অন্যান্যরা তাকে ঘেরাও করে ফেলে।
এক পর্যায়ে তার চোখে মুখে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দিয়ে তাকে টানা-হেঁচড়া করে পাশের ক্ষেতের আইলের থাকা একটি গাছের সঙ্গে পেছনে হাত রেখে বেঁধে ফেলে। একইসঙ্গে পাশের অন্য গাছের সঙ্গে টানা দিয়ে বেঁধে ফেলে তার ২ পা। এছাড়া তার গোপনাঙ্গসহ পেটে, বুকে, পিঠে উপুর্যপরি কিল-ঘুষি-লাথির আঘাতে তাকে নিস্তেজ করে ফেলে। ওই নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে লাখী আক্তার।
তবে অভিযুক্ত আসামি আবু সালেহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই দিন জমিতে ধান কাটতে গেলে আমার ভাই শফিউল্লাহ ও তার স্ত্রী আমাদেরকে দা দিয়ে ধাওয়া করে। আমরা তা প্রতিরোধ করি। শহিদুল্লাহর স্ত্রী ডলি খানমকে আমার দুই ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ধান ক্ষেতের পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং পরে আমরা পুলিশকে খবর দেই।
তিনি বলেন, পুলিশ এসে আমাদের থানায় নিয়ে ওই দিনের বিষয়টি আপোষ মীমাংসা করে দেন। এখন আমার ভাই পূর্ব আক্রোশের জের ধরে আমাদেরকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে আমাদের হয়রানি করার চেষ্টা করছে। প্রকৃত পক্ষে আমার ভাই শহিদুল্লাহর স্ত্রী ডলি খানমকে কোনও ধরনের নির্যাতন করা হয়নি এবং তার পেটের সন্তান নষ্ট করার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ডাহা মিথ্যা ও বানোয়াট।
নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী শফিউল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার বড়ভাই সেনাসদস্য নেছার উদ্দিনের ইন্ধনে তার স্ত্রী লাখী আক্তার এবং অপর ২ ভাই আবু সালেহ ও সলিমউল্লাহসহ তাদের ভাড়াটে লোকজন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ডলি খানমকে বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দিয়েছে। এছাড়া তার প্রভাবেই থানা পুলিশের এসআই ওমর ফারুক মহিলা কনস্টেবলসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ডলি খানমকে উদ্ধারের পরও কোন প্রতিকার পাইনি।
নকলা থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, জমি-জমার বিষয় নিয়ে ভাই-ভাইদের মধ্যে বিরোধ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার আশঙ্কার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে দুপক্ষকেই শান্ত করা হয়েছিল। গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।