০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৪

মেসেঞ্জারে কথোপকথন নিয়ে বিরোধে স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাত

অমরখানা উচ্চ বিদ্যালয়  © সংগৃহীত

পঞ্চগড়ে ফেসবুক মেসেঞ্জারের কথোপকথনকে কেন্দ্র করে সোহান আলী (১৫) নামে অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রকে মারধর ও ছুরিকাঘাতের অভিযোগ উঠেছে। 

সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার অমরখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর স্থানীয়রা ১২ কিশোরকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

সেদিন রাতেই পঞ্চগড় সদর থানায় সোহানের বড় ভাই রশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। গুরুতর আহত সোহান বর্তমানে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সোহান অমরখানা এলাকার বদিনাজোত গ্রামের ভ্যানচালক তরিকুল ইসলামের ছেলে।

জানা গেছে, আটক ১২ কিশোরই অপ্রাপ্তবয়স্ক, যাদের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তারা সবাই সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং সাতমেড়া ইউনিয়ন, জগদল বাজার, খালপাড়া, প্রধানপাড়া, বানিয়াপাড়া, চেকরমারীসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া তারা পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কালেক্টরেট স্কুল, জগদল উচ্চ বিদ্যালয় ও জগদল আলিম মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ১০ থেকে ১২ দিন আগে একটি ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে সোহানের সঙ্গে অভিযুক্ত কিশোরদের কথাকাটাকাটি ও গালিগালাজের ঘটনা ঘটে। সোমবার বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার সময় অভিযুক্তরা তাকে ঘিরে ফেলে। এ সময় নূর নামের এক কিশোর সাইকেলের ফ্রিহুইল দিয়ে সোহানের মাথায় আঘাত করে। আরেক কিশোর কাইয়ুম ধারালো ছুরি দিয়ে সোহানের বাম বুকে আঘাত করতে গেলে সোহান হাত তুলে প্রতিহত করে এবং তার কবজির রগ কেটে যায়। অন্যান্যরা তাকে কিলঘুষি ও লাথি মারে।

সোহানের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে হামলাকারী নূরসহ কয়েকজন পালিয়ে গেলেও ১২ কিশোরকে ধরে ফেলে। ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় কিছু কিশোর গণপিটুনির শিকারও হয়। পরে অমরখানা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম ও অন্য শিক্ষকরা উত্তেজিত জনতার হাত থেকে তাদের উদ্ধার করে বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির একটি কক্ষে রাখেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও প্রধান শিক্ষক নুরুজ্জামান নূর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে আটক কিশোরদের হেফাজতে নেয় এবং হামলায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম জব্দ করে।

গুরুতর আহত সোহানকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রংপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভুক্তভোগীর বাবা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ বড় ভাই রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় থাকা অবস্থান থেকে ভাই ৫-৬ দিন আগে পরীক্ষা দিতে বাড়ি এসেছে। পরীক্ষা শেষে স্কুল থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মাথা ও বুকে অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। বাঁচার চেষ্টা করতে গিয়ে তার রগ কেটে যায়। আমরা ন্যায় বিচার চাই।’

বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভবিষ্যতে যেন আর এমন না ঘটে সেই প্রত্যাশা করি।’

অন্যদিকে আটক কিশোরদের পরিবার দাবি করে, তারা বন্ধুর মারামারির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে আটক হন। হামলায় তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন তারা।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ হিল জামান বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আটকরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের নারী ও শিশু ডেস্কে হেফাজতে রাখা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’